যুক্তরাজ্যে নভেল করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে; যা দেশটির কিছু অংশে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটছে। সোমবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক দেশটির পার্লামেন্টের সদস্যদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ৬০টি এলাকায় নতুন প্রজাতির করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। হ্যানকক বলেন, ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এই নতুন ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কাজ শুরু করেছেন।

ব্রিটিশ এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, নতুন ধরনের এই ভাইরাস আরও মারাত্মক অথবা ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা সেবিষয়ে কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। হাউজ অব কমন্সের এমপিদের তিনি বলেন, গত সপ্তাহজুড়ে ধারাবাহিকভাবে লন্ডন, কেন্ট, অ্যাসেক্সের কিছু অংশ এবং হার্টফোর্ডশায়ারে এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটির প্রধান শিকার হয়েছে ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল। সেখানে ১ হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও দেশের অন্তত ৬০টি স্থানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভাইরাসের এই নতুন ধরন এবং এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার বিষয়ে আমরা এখনও তেমন কিছু জানি না। তবে আমাদের উচিত হবে এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী সেবিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া; কারণ ইতোমধ্যে আমরা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছি।’

ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেছেন, সোয়াব টেস্টের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রধানত কেন্ট এবং এর আশপাশের এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। 

করোনাভাইরাসের সঙ্গে নতুন এই ধরনটির স্পাইক প্রোটিন, যা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকোষে আটকে থাকে এবং দেহকোষকে সংক্রমিত করে; তার সঙ্গে গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের এই নতুন ধরন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

যে কারণে এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে কোভিড টিকা কতখানি কার্যকর হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ টিকার প্রাথমিক কাজ করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ধ্বংস করা।

নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বিশদভাবে জানতে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। তবে এর পাশাপাশি তারা জনগণকে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।

খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। নতুন প্রজাতিটি প্রচলিত করোনাভাইরাসের তুলনায় অধিক সংক্রামক বা বিপদজনক – এখনও তা প্রমাণিত হয়নি।

বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালেন ম্যাকনেলী

‘এই মুহূর্তে আমদের যা প্রয়োজন তা হলো সতর্ক থাকা এবং চোখ-কান খোলা রাখা। এই প্রজাতিটি সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে আমরা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। মিউটেশন খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া এবং আমরা আশা করছি- করোনাভাইরাসের নতুন এই প্রজাতিটি বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। জনগণকে তাই অনুরোধ করবো দুশ্চিন্তা না করে শান্ত থাকতে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েলকাম’ এর পরিচালক ড. জেরেমি ফারার বলেন,‘ আমাদের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা অব্যাহত থাকবে। আমরা অবশ্যই এই ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করার একটা উপায় বের করতে সক্ষম হবো।’

সূত্র : বিবিসি।

এসএমডব্লিউ/এসএস