দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করেনাভাইরাসের নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত রোগী এবার শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশটির সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত দুই রোগী পাওয়া গেছে বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার ওই নতুন ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে এটাই প্রথম। আফ্রিকার দেশটিতে শনাক্ত ওই ধরনটি সাধারণ করোনাভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক বলে এর আগে জানিয়েছিল বিষেষজ্ঞরা।

কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার নতুন ধরনে আক্রান্ত ওই দুই রোগী সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও ভ্রমণ করেননি। এমনকি তাদের দুজনের মধ্যে কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই। উভয় রোগীই প্রাপ্তবয়স্ক।

গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তারা এর বেশি কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি। তাদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে এটা স্পষ্ট যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার নতুন ওই ধরনটি ইতো মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের গণস্বাস্থ্য পরিচালক ড. ব্রানন ট্রাক্সলর বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত সার্স-কভ-২ নামে করোনার ওই নতুন ধরনটি আমাদের এখানে পৌঁছে গেছে, এটা সকল সাউথ ক্যারোলিনাবাসীর জন্য অশনিসঙ্কেত। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে না।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ওই ধরনটি এখন পর্যন্ত ৩১টি দেশে ছড়িয়েছে বলে গত বুধবার জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত এক সপ্তাহে এটি নতুন করে আরও আটটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

ডব্লিউএইচও বলছে, ভাইরাসের এই ধরনটি ব্রিটেনে শনাক্ত করোনা ধরনের থেকেও বেশি সংক্রামক বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এটাকে খুব উদ্বেগের বিষয় বলেও উল্লেখ করে সংস্থাটি।

এর আগে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, একাধিক মিউটেশন ঘটে সার্স-কভ-২ এখন ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। তাছাড়া এটা কমবয়সীদের শরীরে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি টিকার কার্যকারিতায়ও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেপ, কোয়াজুলু-নাটাল এবং ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি। সেসময় দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রথম সংক্রমণের খবর আসে নেলসন ম্যান্ডেলা বে থেকে। ভাইরাসের এই প্রকারভেদে অন্তত তিনটি পরিবর্তনের কথা জানা গেছে।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেসেলস জানিয়েছিলেন, বর্তমানে যে ভ্যাকসিনগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো কতটা কাজ দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি এক বার করোনা হয়ে যাওয়া ব্যক্তিও এই ভাইরাসের নতুন এই ধরনে নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এখন পর্যন্ত ৫৬টি দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এসব দেশে টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ। জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ জনগণকে টিকা দিয়ে ইসরায়েল আছে শীর্ষে।

এদিকে বছরের শুরু থেকে ৭ দশমিক ৭ সেকেন্ডে গড়ে একজন করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একই সময়ে দৈনিক ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুহার এখন ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম