ট্রাম্প প্রসাশনের অধীনে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনে না চললে আফগান শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে বলে তালেবান বিদ্রোহীদের সতর্ক করে দিয়েছে পেন্টাগন। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) পেন্টাগন থেকে একথা জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার পেন্টাগন জানায়, ২০২০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি না মানলে তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে বলে বিশ্বাস করে বাইডেন প্রশাসন। ওয়াশিংটন এই প্রচেষ্টাতে (শান্তি চুক্তি মেনে চলতে) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে বলেও জানায় যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিরক্ষা দপ্তর।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় তিন মাসের আলোচনার পর মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে হবে ওয়াশিংটনকে। এরপর তালেবান বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে তিন সপ্তাহের বিরতির পর কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আফগানিস্তানের সরকারের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়। দুই দশক ধরে চলমান আফগান যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। আফগান সরকার ও তালেবানের প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন।

তবে আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ, কাতারে শান্তি আলোচনাসহ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত বছর সংঘর্ষে প্রায় তিন হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ত্যাগ ও আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সহিংস হামলা বন্ধে চুক্তি অনুযায়ী তালেবানরা প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা পর্যন্ত সংকট নিরসন কঠিন হবে, তবে আমরা এখনও (চুক্তি মেনে চলতে) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা বলছেন, হক্কানি নেটওয়ার্ক এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে তালেবানকে।

আফগানিস্তানে গত প্রায় ২০ বছর ধরে তালেবান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে মার্কিন বাহিনী। তালেবানদের ক্ষমতা থেকে সরানো গেলেও দেশটির অনেক অংশই এখনও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে রক্তক্ষয়ী হামলার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এজন্য তালেবানকে দায়ী করে আসছে দেশটির প্রশাসন। সম্প্রতি দেশটির গোয়েন্দা প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জঙ্গী গোষ্ঠিটি ১৮ হাজারের বেশি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।

গত ১৭ জানুয়ারি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুই নারী বিচারককে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। হামলায় আহত হয় আরও দুজন। এছাড়া দেশটিতে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সরকারপন্থী মানুষজনকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে তার বাড়ির সামনে থাকা গাড়িতে গুলি করে বন্দুকধারীরা।

এসব হামলা বা হত্যার বেশিরভাগের দায় কোনো জঙ্গি সংগঠনই স্বীকার করেনি। তবে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এসব হত্যার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানকে দায়ী করে থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই হামলাগুলোর অধিকাংশই ঘটাচ্ছে তালেবান। চলমান সংলাপে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এই পন্থা বেছে নিয়েছে উগ্র এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি।

তবে যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বানকে পাত্তা না দিয়ে ব্যাপকহারে হামলা ও হত্যাকাণ্ড আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানদের শান্তি প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

উল্লেখ্য, নাইন-ইলেভেনের হামলার পর তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে আফগানিস্তানে হামলা করে মার্কিন সেনারা। তবে সেসময় তালেবান গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে সরানো গেলেও পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি আমেরিকা।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম