ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই চলতি সপ্তাহে উপসাগরে যুদ্ধের মহড়া চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ এক কমান্ডার। দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় ইসারায়েলের হামলা পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র উদ্বেগের মাঝে ওই মহড়া চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর যুদ্ধের এই মহড়ায় ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেখা যায়, শুক্রবার মহড়ার শেষ দিকে ইসরায়েলের ডিমোনো পারমাণবিক চুল্লির মতো লক্ষ্যবস্তু ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম বলছে, বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইহুদিবাদী শাসকদের ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সফলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া শেষ করেছে।

বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি বলছেন, ‘এই মহড়ার একটি অত্যন্ত পরিষ্কার বার্তা আছে। সেটি হলো ইহুদিবাদী শাসকদের কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল থেকে সতর্ক থাকার ব্যাপারে গুরুতর এবং বাস্তব হুঁশিয়ারি।’

তিনি বলেন, ‘তারা কোনও ভুল পদক্ষেপ নিলে আমরা তাদের হাত কেটে ফেলবো... প্রকৃত অভিযান এবং সামরিক মহড়ার মধ্যে দূরত্ব কেবল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কোণ ঘুরিয়ে দেওয়া।’

দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি বলেছেন, উপসাগরে ওই মহড়ায় বিভিন্ন ধরনের ১৬টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একযোগে নিক্ষেপ করা হয়। যা আগে থেকে ঠিক করে রাখা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে ধ্বংস করে ফেলে।

যুদ্ধের মহড়ায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেন। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এসব কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা অবিলম্বে ইরানকে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিকে তেহরানের ‘প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ’ অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তেহরান বলছে, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আওতা প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার এবং এই অঞ্চলে চিরশত্রু ইসরায়েল ও মার্কিন ঘাঁটিতে পৌঁছাতে সক্ষম।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি রয়েছে। দেশটি এসব অস্ত্রকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধকারী এবং প্রতিশোধমূলক হাতিয়ার মনে করে।

২০১৫ সালের ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে বিশ্ব শক্তির দেশগুলো প্রচেষ্টা চালালেও ইসরায়েল বিরোধিতা করছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তেহরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদেক্ষপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তেলআবিব। ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা শান্তিপূর্ণ।

পারমাণবিক সমঝোতার আলোচনায় ইরানকে সময়ক্ষেপণ করতে না দিতে বিশ্ব শক্তির দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্তজ। ইরানের অনুরোধে আগামী সোমবার থেকে এই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ হিসেবে ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস