প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের তলদেশের আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের পর সুনামির আশঙ্কা অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। শনিবার সমুদ্রের নিচে অগ্ন্যুৎপাতের পর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ টোঙ্গার বৃহত্তম দ্বীপ টোঙ্গাতাপুতে সুনামি আঘাত হানে। এছাড়া জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি। অবশ্য সুনামির আঘাতের পর টোঙ্গায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।

এদিকে রোববার প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার (পিটিডব্লিউসি) নামক একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, সুনামির আশঙ্কা বেশ কমে গেছে। তবে শক্তিশালী বা অস্বাভাবিক ঢেউয়ের ব্যাপারে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে এখনও সতর্ক থাকতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গার আগ্নেয় পর্বত হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই থেকে অগ্নুৎপাত শুরু হয়। অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে সাগরে বড় বড় ঢেউ দেখা দেয়। এছাড়া আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে নির্গত ছাই, গ্যাস ও ধোঁয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচুতে উঠে যায়। উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, দেশটির রাজধানীতে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ছাই।

রেডিও নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরিতে শুক্রবার প্রথম অগ্ন্যুৎপাতের শুরু হয়। এর ফলে আকাশের ২০ কিলোমিটার উচ্চতায় ধোয়ার কুণ্ডলী পৌঁছায়। আর স্থানীয় সময় শনিবার বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটের দিকে দ্বিতীয়বারের মতো এই আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত শুরু হয়।

এপি বলছে, শনিবার সন্ধ্যার দিকে হওয়া এই অগ্ন্যুৎপাতের দৃশ্য উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতেও উঠে এসেছে। দুই দফায় হওয়া এই অগ্ন্যুৎপাতের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে হাজার মাইল দূরের প্রতিবেশি নিউজিল্যান্ড থেকেও। এমনকি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্য থেকেও।

এদিকে সুনামি সতর্কতা জারির পর জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় টোঙ্গার আতঙ্কিত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উপকূলীয় এলাকা ছেড়ে উঁচু ভূমির দিকে ছুটে যান। এছাড়া অগ্ন্যুৎপাতের ফলে টোঙ্গায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা টোঙ্গানদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজ নিতে না পেরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন।

এপি বলছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত টোঙ্গার সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য সরকারি সাইট হালনাগাদহীন অবস্থায় রয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন জানিয়েছেন, সুনামির কারণে টোঙ্গায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু উপকূলীয় এলাকা এবং ছোট দ্বীপগুলোর সঙ্গে টোঙ্গা কর্তৃপক্ষ এখনও যোগাযোগ করতে না পারায় হতাহতের বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

এর আগে শনিবার দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গায় সমুদ্রের একটি আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলে সতর্কতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।

বিবিসি জানিয়েছে, টোঙ্গায় একটি আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পর নিজেদের সমুদ্র উপকূলে ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হতে পারে বলে জানায় জাপান। আর দেশটির দক্ষিণে ইতোমধ্যেই ১.২ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছিল পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি।

অন্যদিকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অগ্ন্যুৎপাতের পর নিজেদের উপকূলীয় এলাকায় তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি শক্তিশালী এই ঢেউয়ে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের আগে টোঙ্গা ছাড়াও প্রতিবেশি দেশ নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল ও ফিজিতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।

টিএম