স্বাস্থ্য, খাদ্য, জ্বালানি শক্তি এবং পানির সংকট সমাধানে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ৫টি  স্টার্ট আপ ও ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিকল্প টেকসই জ্বালানি শক্তির উৎপাদন ক্যাটেগরিতে আমিরাতের এই পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশি স্টার্ট আপ সোলশেয়ার।

সোমবার আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাই এক্সপো-২০২০ এ জায়েদ টেকসই পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা করেছেন। পুরস্কার জয়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান বার্ষিক ৬ লাখ ডলারের (বাংলাদেশি ৫ কোটি ১৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকার বেশি) করে তহবিল পাবে। 

ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার বিজয়ী স্টার্ট আপের নাম ঘোষণা করা হয়েছে দুবাই এক্সপোতে। স্বাস্থ্য খাতের সংকট সমাধানে টেকসই উপায় উদ্ভাবন করে আর্জেন্টিনার ম্যামোটেস্ট, খাদ্যে ভারতের এসফরএস, সৌরশক্তিতে বাংলাদেশের সোলশেয়ার এবং পানিতে সিঙ্গাপুরের ওয়াটারোম এই তহবিল পেয়েছে।

গ্লোবাল হাই স্কুলের পঞ্চম ক্যাটাগরিতে বিশ্বের ছয়টি অঞ্চলের ছয় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। বিজয়ীরা হল, ডোমিনিকান রিপাবলিকের ইনস্টিটিউট আইবেরিয়া (আমেরিকা অঞ্চলের), স্পেনের লাইসিও ইউরোপীয় (ইউরোপ ও মধ্য-এশিয়া অঞ্চলের), ইসরায়েলের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় আর্ন্তজাতিক স্কুল (মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা), উগান্ডার সায়িদিনা আবু বকর সেকেন্ডারি স্কুল (সাব সাহারা অঞ্চলের), মালদ্বীপের হীরা স্কুল (দক্ষিণ এশিয়া) এবং জাপানের ইউডব্লিউসি আইস্যাক। প্রত্যেকটি স্কুল তাদের প্রকল্প শুরু অথবা সম্প্রসারিত করতে এক লাখ ডলার করে পাবেন।

পুরষ্কার বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে— সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বসবাসকারী নারীদের স্তন ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদানের উচ্চমানের উদ্ভাবনী উদ্যোগ, গ্রামীণ নারীদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করার জন্য সোলার ডিহাইড্রেশন প্রযুক্তি, পিয়ার-টু-পিয়ার এনার্জি এক্সচেঞ্জ নেটওয়ার্ক সমাধান ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার উদ্যোগ এবং বহনযোগ্য পানির ফিল্টারের মাধ্যমে দূষিত পানির বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৈরি ব্যবস্থাপনা।

সোলশেয়ার বাংলাদেশ কী?

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অনেক গ্রামেই এখন সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। আর এই সৌরবিদ্যুৎ ভাগাভাগি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। সাধারণত গ্রামের মানুষ তাদের ঘরে যে সোলার প্যানেল স্থাপন করেন, তাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকে।

অর্থাৎ সোলার প্যানেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যাটারির স্টোরেজে জমা হয়। কিন্তু একবার সেই ব্যাটারির ধারণক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলে সোলার প্যানেলের বাকি বিদ্যুৎ আর জমা হয় না। আর এই অব্যবহৃত বিদ্যুতের যেন অপচয় না হয়, এটা বিক্রি করে অন্যের চাহিদা যেন মেটানো যায়— এমন ভাবনা থেকে এই সৌর বিদ্যুৎ ভাগাভাগির কাজটি শুরু করে সোলশেয়ার নামের বাংলাদেশি স্টার্ট আপ।

তাদের তৈরি সোলবক্স মিটার নামের একটি ডিভাইস দিয়েই কাজটি হচ্ছে। প্রত্যেকটি ডিভাইস একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি মাইক্রোগ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আর যাদের সোলার হোম সিস্টেম নেই তারাও যুক্ত হতে পারবেন এতে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত দুই ডজনের বেশি মাইক্রোগ্রিড স্থাপন করে তাদের ডিভাইস ইনস্টল করেছে সোলশেয়ার। তাদের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত তিন হাজার পরিবার এই সৌর বিদ্যুৎ ভাগাভাগির সুবিধা নিচ্ছে— যাদের বেশিরভাগই কৃষক।

সোলশেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. গ্রোহ বলেছেন, বিদ্যুৎ দারিদ্রতা এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বের নতুন চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শক্তি পরিষেবা সরবরাহ করে সোলশেয়ার।

বাংলাদেশের জ্বালানি ও পরিবহন খাতকে এক বিন্দুতে মিলিত করার লক্ষ্য নিয়েছে সোলশেয়ার। ৬০ লাখ বাসাবাড়ির সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ১৫ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ির সাথে সংযুক্ত করতে চায় এই স্টার্ট আপ। বর্তমানে তারা বাংলাদেশে ৬টি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করেছে; যেখানে প্রায় ৪০০টি বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার গাড়ির চার্জ হয়।

সূত্র: খালিজ টাইমস, বিবিসি।

এসএস