রিমান্ডে সু চি
সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দু’দিন পর মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে দুই সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ। আমদানি-রফতানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।
স্টেট কাউন্সিলরের উপাধি নিয়ে অং সান সু চি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেতা হিসেবে দেশ পরিচালনা করে আসছিলেন। সোমবার নেইপিদোতে তার বাসভবনে সামরিক কর্মকর্তাদের তল্লাশি অভিযানের সময় ওয়াকি-টকি পাওয়া যায়। যা দেশটির আমদানি-রফতানি আইনের লঙ্ঘন করে আমদানি এবং অবৈধভাবে অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আমদানি-রফতানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এনএলডির মুখপাত্র কী তোয়ে বলেছেন, অং সান সু চি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক থাকবেন। তিনি বলেছেন, ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী- অং সান সু চির বিরুদ্ধে আমদানি ও রপ্তানি আইনে ১৪ দিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
এছাড়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এনএলডির ওই মুখপাত্র।
বিজ্ঞাপন
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরুর এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির ক্ষমতা আবারও আঁকড়ে ধরেছে সামরিক বাহিনী।
সামরিক বাহিনীর পরিকল্পিত অভ্যুত্থানে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত এবং এবং এনএলডির নেতাকর্মীদের আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিন্দার পাশাপাশি মিয়ানমারে দ্রুত গণতন্ত্র ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছে।
৭৫ বছর বয়সী শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানমারের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশের আবেদনের পর রিমান্ড মঞ্জুর করেন দেশটির একটি আদালত। এতে বলা হয়, রাজধানী নেইপিদোতে অং সান সু চির বাসভবনে সামরিক বাহিনীর তল্লাশির সময় বিদেশি ওয়াকি-টকি পাওয়া যায়। যা অবৈধভাবে আমদানি এবং কোনও ধরনের অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে।
বাসভবনে পাওয়া কিছু নথির বিষয়ে সু চিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে নেইপিদো পুলিশ।
পৃথক একটি নথিতে দেখা যায়, পুলিশ দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছে। মিয়ানমারের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে মিয়ানমারের সাবেক এই স্টেট কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদনের বিষয়ে পুলিশ, দেশটির সামরিক সরকার এবং আদালতের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে নিতে পারেনি রয়টার্স।
জান্তা সরকারের আমলে ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি ছিলেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চি। ২০১৭ সালে রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও নিশ্চুপ ছিলেন গণতন্ত্রের এই লড়াকু সৈনিক। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ঘিরে বিশ্বজুড়ে সুনামহানি হলেও দেশের ভেতরে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি।
এক বিবৃতিতে সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বলছে, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের অফিসে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
গত ৮ নভেম্বরে এনএলডির জয়ের পর দলীয় কার্যালয়ে এই বেআইনি অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে দলটি। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এনএলডি জয়ী হলেও জালিয়াতির অভিযোগে গত সোমবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। যদিও দেশটির নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি৭ বুধবার মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, নির্বাচনের ফলের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
অভ্যুত্থান অনিবার্য ছিল, দাবি সেনাপ্রধান হ্লেইংয়ের
সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সেনাবাহিনীর জন্য অনিবার্য হয়ে পড়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। বিশ্বজুড়ে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নিন্দার ঝড় শুরু হওয়ায় প্রথমবারের মতো তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে বুধবার জানিয়েছে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের স্বৈরশাসনের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের ১০ বছরের যাত্রা হোঁচট খায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমের আবারও সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ায়।
অভ্যুত্থানের পর সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের হাতে আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে সামরিক বাহিনী।
অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। তিনি বলেন, নির্বাচনী জালিয়াতির ব্যাপারে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় আইন মেনেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।