পারস্য উপসাগর থেকে বিমানবাহী রণতরী সরিয়ে নিল যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে পারস্য উপসাগর থেকে বিমানবাহী রণতরী সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রাতিরিক্ত অবনতির পর সৃষ্ট যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে উপসাগরে এই রণতরী মোতায়েন করেছিল ওয়াশিংটন।
জন কিরবি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
নয় মাস সাগরে থাকার পর ইউএসএস নিমিৎজ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে রওয়ানা হয়েছে শোনা গেলেও কিরবি তা নিশ্চিত করেননি। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বাড়ালেও বাইডেন প্রশাসন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছে না।
বিজ্ঞাপন
অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরানের কোনো সামরিক হুমকি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা হালকা ভাবে (চিন্তা করে) কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।’
কিরবি আরও বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বিশ্বাস করেন- যেকোন হামলা বা হুমকি মোকাবিলার মতো শক্তিশালী অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। এছাড়া পারস্য উপসাগর থেকে বিমানবাহী রণতরী প্রত্যাহারের অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক কৌশল অনুধাবন করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
অবশ্য নিকট ভবিষ্যতে ইউএসএস নিমিৎজ রণতরী আবারও ওই অঞ্চলে স্থানান্তর করা হবে কিনা সে বিষয়ে কিরবি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমরা হুমকিগুলো পর্যালোচনা করছি। প্রতিনিয়তই এসব হুমকি সঠিকভাবে মোকাবিলার চেষ্টাও করছি আমরা।’
এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন জো বাইডেন। ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। এমনকি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ওবামার পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রবার্ট ম্যালেকে ইরানবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বাইডেন।
এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে- বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতির সবচেয়ে কঠিন বিষয়টিই সামলাতে হবে ম্যালেকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকার পর দেশটির সঙ্গে ওয়াশিংটনের পরমাণু চুক্তি তাকে নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখতে বাধ্য হয় ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে একক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দেশটি।
জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ'র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারেও তখন সম্মতি দিয়েছিল তেহরান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।
ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সূত্র: বিবিসি
টিএম