মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতাদের এটা বোঝাতে হবে যে, দেশ শাসন করার জন্য অভ্যুত্থান কোনো বৈধ পন্থা নয়।

একইসঙ্গে সামরিক শাসন বাতিল করে দেশটিতে আবারও সাংবিধানিক শাসন চালুর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আর এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও একমত থাকবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ ও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা সবই করবো। নির্বাচনের ফলাফল ও জনগণের রায় পাল্টে দেওয়া সম্পূর্ণভাবে ‘অগ্রহণযোগ্য’।’

তার মতে, ‘এর মাধ্যমে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানকারী সামরিক নেতাদের আমরা এটা বোঝাতে পারবো যে, দেশকে শাসন ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান কোনো বৈধ পন্থা নয়।’ 

এর আগে গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু চীনের বিরোধীতার কারণে সংস্থাটি এই ইস্যুতে কোনো যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হয়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের নিন্দা জানাতে যৌথ বিবৃতি দিতে চীনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু চীন সমর্থন না দেওয়ায় তা হয়নি। কারণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীনের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের আগে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার। তিনি বলেন, গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্পষ্টভাবেই নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)।

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ আটক করা হয় অনেক শীর্ষ নেতাকে। এছাড়া একযোগে ২৪ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকেও অপসারণ করে অভ্যুত্থানকারীরা। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি)।

এদিকে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দু’দিন পর বুধবার অং সান সু চিকে দুই সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে দেশটির পুলিশ। আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে এনএলডি’র একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেন।

অভ্যুত্থানের পর সাবেক স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি। তবে অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইংকে অবশ্য ১১ সদস্যের জান্তা সরকার গঠনের সময় দেখা গিয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি

টিএম