বিশ্বজুড়ে মহামারির অবসানে বিজ্ঞানীদের তৈরি ‌‘ভ্যাকসিন’ আশা জাগালেও করোনাভাইরাসকে থামাতে পারবে না এবং এটি কোনও ‌‌‘সিলভার বুলেট’ও নয়। বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষ এক কর্মকর্তা অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন।

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিয়োজিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন। বিশ্ব কখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা করতে পারে; মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এমন প্রশ্নের জবাবে তাকেশি কাসাই বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার ওপর নির্ভর করছে। আমাদের প্রত্যেকের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের ওপর এটি নির্ভর করছে।’

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিনের সংখ্যা সীমিত হবে এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সদস্যদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, 

ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সদস্যরা ছাড়া অন্যান্যদের ভ্যাকসিনের জন্য ১২ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এমনকি তারপরও বেশ কিছু অনিশ্চয়তা আছে এবং অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। 

ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই

তাকেশি কাসাই বলেন, আমাদের প্রত্যেকের করোনা রোধের কার্যক্রম এবং আচরণ অব্যাহত রাখতে হবে। এটি শুধুমাত্র আমাদের নিজেদেরই নয়, বরং আমাদের আশপাশের লোকজনকেও রক্ষা করবে। হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সেই তুলনায় ভালো করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে আরও খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রাখা উচিত বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তাকেশি। 

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কর্মসূচির পরিচালক বাবাটুন্ডে ওলোওকুরে বলেন, এখন তরুণরা এই ভাইরাসে বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনায় সংক্রমণের ধারা বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্ম থেকে ২০-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। করোনা বিধি-নিষেধে শিথিলতা আনার পর তরুণদের চলাফেরা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি হচ্ছে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এখনও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের লোকজন বেশি মারা যাচ্ছেন। বৈশ্বিক তুলনায় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ভালো করলেও বাবাটুন্ডে বলেন, এই অঞ্চলে গত সাতদিন ধরে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং মালয়েশিয়ায় সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।  

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা এবং সঙ্কট বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস মহামারি ঘোষণা করে গত ১১ মার্চ। বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত ১৬ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে এবং এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি।

সূত্র: সিএনএন, ওয়ার্ল্ডোমিটারস। 

এসএস