স্লোগানে স্লোগানে বিক্ষোভে উত্তাল ইয়াঙ্গুন
স্বৈরশাসনবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সম্প্রতি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি দাবি করছেন তারা। জেনারেলরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর মিয়ানমারে এত বড় বিক্ষোভ আগে হয়নি। তাই অনেকে একে নজিরবিহীন হিসেবেও অভিহিত করছেন।
সোমবার অভ্যুত্থানের পর বন্দি নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সামরিক জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক, হারবে, হারবে; গণতন্ত্র, জিতবে, জিতবে’। তারা যে পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সেখানে লেখা, ‘সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে’। অনেকে এনএলডির লাল পোশাক পরে ও লাল পতাকা নিয়ে এসেছেন।
— Cape Diamond (@cape_diamond) February 6, 2021
শনিবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হওয়া ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ইয়াঙ্গুনের ইনসাইন রোড এবং হ্লেডান জংশনের একটি প্রধান মোড়ে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় পুলিশ তাদেরকে বাধা দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
বেসরকারি মালিকাধানী গাড়ির চালকরা এই জনবিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তারা তাদের গাড়ির হর্ন বাজিয়ে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। স্বৈরশাসকদের পতন এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত অং সান সু চিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন তারা।
অভ্যুত্থানের পর চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। এতে করে চলমান এই অসহযোগ আন্দোলন দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
অভ্যুত্থানের পর গত এক সপ্তাহে মিয়ানমারের জনগণ নিজেদের মত করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। দেশটির চিকিৎসক এবং শিক্ষকরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ কাজে যাচ্ছেন না। প্রতিরাতে জনগণ হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে নিজেদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন।
শুক্রবার দেশের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে সমবেত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দেশনেত্রী অং সান সু চিসহ ক্ষমতাচ্যুত দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে স্বৈরশাসনবিরোধী বিক্ষোভ করেন।
নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর প্রথম প্রতিবাদ করেন চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্যর্মীরা। এরপর থেকে বিক্ষোভ ক্রমেই বেড়েছে। রাজধানী নেপিডোর বাইরে অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ জোরালো হচ্ছে।
টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘আমরা স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার হারিয়ে ফেলেছি। এখন দ্রুত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। দয়া করে এবার মিয়ানমারের আওয়াজ শুনুন।’ তার মতো স্বৈরশাসকদের পতন চেয়ে আরও অনেকে টুইট করেছেন।
বিক্ষোভ দমনে নানা পদক্ষেপ
মিয়ানমারের মানুষ যাতে একজোট হয়ে বিক্ষোভ করতে বাধাগ্রস্ত হয় এজন্য গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকের পর টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থাও বেশ নাজুক। যোগাযোগে নানারকম বিঘ্ন ঘটছে।
সোমবারের অভ্যুত্থান নিয়ে দেশটিতে বিক্ষোভ জোরদার হওয়ার মুখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার মানুষগুলোর কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে স্বৈরশাসকরা।
মিয়ানমারের অন্যতম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে যে, পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে প্রবেশাধিকার বন্ধ করার জন্য সামরিক জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।
স্থিতিশীলতার নাম করে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতারা অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করে দেয়। তবে এরপরও মিয়ানমারজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ জোরালো হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের কারণ
অভ্যুত্থানের খবর আসার পর বার্মিজরা ফেসবুকে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। কারণ দেশটিতে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয়। তথ্য ও সংবাদ প্রাপ্তির প্রাথমিক উপায় ফেসবুক। কিন্তু তিনদিন পর জান্তা সরকার ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।
ফেসবুক বন্ধ করার পর হাজার হাজার ব্যবহারকারী টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে অভ্যুত্থানবিরোধী হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১০টা থেকে দেশটিতে এই দুই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এএস