সু চির মুক্তির দাবিতে তাইওয়ানে বিক্ষোভ
সামরিক অভ্যুত্থানে আটক দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাইওয়ানে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিকরা । শনিবার তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের শহরতলী এলাকায় তিন শতাধিক বার্মিজ এই মিছিলে অংশ নেন।
তাইওয়ানে প্রায় ৪০ হাজার বার্মিজ ও বার্মিজ বংশোদ্ভুত মানুষ বাস করেন। তাদের একটি বড় অংশ ১৯৬২ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আগ্রাসন থেকে নিজেদের বাঁচাতে তাইওয়ানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাজধানী তাইপের যে অংশে তারা বসবাস করেন, ওই এলাকাটিকে তাইওয়ানের অধিবাসীরা নাম দিয়েছেন ‘লিটল বার্মা’।
বিজ্ঞাপন
সু চির দল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির পতাকার রং লাল। শনিবার মিছিল নিয়ে লিটল বার্মার বিভিন্ন সড়কে যারা প্রদক্ষিণ করেছেন, সবার পোশাকের রং ছিল লাল; হাতে ছিল সু চির ছবি এবং ইংরেজি, বার্মিজ ও চীনা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ড।
১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চলার সময় নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়েছিল দেশটির সামরিক বাহিনী। তাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে তখন তাইওয়ানে পালিয়ে এসেছিলেন কো কো দু নামের সাবেক এক এনএলডি কর্মী। শনিবারের মিছিলের অন্যতম সংগঠকও তিনি।
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে কো কো দু জানান, তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সবসময়েই তাকে অনুপ্রেরণা দেয় যে একদিন মিয়ানমারেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি বলেন, ‘তাইওয়ান খুবই গণতান্ত্রিক একটি দেশ। আমার স্বপ্ন, কোনও একদিন…হয়তো সেদিন আমি বেঁচে থাকব না…মিয়ানমারেও তাইওয়ানের মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’
কো কো দুর মতো মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের আরেক কর্মী ছিলেন ইয়েই, পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে তিনিও একই বছর তাইওয়ানে আশ্রয় নেন।
রয়টার্সকে এই নারী বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমরা মিয়ানমারে সামরিক শাসন দেখছি। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম সামরিক শাসনের জাঁতাকলে দেশকে পিষ্ট হয়ে যেতে দেখেছে। আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন একটি গণতান্ত্রিক মুক্ত পরিবেশে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পায়।
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে-অভিযোগ তুলে গত সোমবার মিয়ানমারের সেনারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার দখল নেয়। আটক করে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতাকে।
ক্ষমতা দখলের পরই সামরিক জান্তা সরকার এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে। অং সান সু চির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করে তাকে পুলিশের হেফাজতে দুই সপ্তাহের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর অভুত্থানের অব্যবহিত পরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গণপ্রতিবাদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ বলে স্লোগান দেন এবং রীতি অনুযায়ী অমঙ্গল দূর করতে হাঁড়ি-পাতিল বাজান।
এছাড়া চলমান অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরের ৭০টি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সামরিক সরকারের অধীনে তারা চিকিৎসাসেবা দেবেন না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ ও সু চির মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যে জাপানে বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির মন্ত্রীসভার শীর্ষ কর্মকর্তা কাসুনোবু কাতো এ বিষয়ে বলেছেন, জাপান বিশ্বাস করে– গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষের সমস্যার সমাধান করা উচিত।
এসএমডব্লিউ