ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদ শেষের আগের দিন, গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যবিদায় নেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুথিদের কালো তালিকাভুক্ত করেন। এ সম্পর্কে তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়েমেনে গত কয়েকবছর ধরে চলা সংঘাতের কারণে বিশ্বের মানবিক বিপর্যয়ের শীর্ষে রয়েছে ইয়েমেন এবং এর জন্য দায়ী হুথি বিদ্রোহীরা।

পম্পেওর এ ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিতের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনের ঘোষণার একদিন পরই নতুন মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে হুথি বিদ্রোহী বিষয়ক সিদ্ধান্তটি বদলের ইঙ্গিত এল।  

রয়টার্সকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবেক প্রশাসন এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা ইয়েমেনে দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়কে আরো দীর্ঘায়িত করবে বলে ইতোমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবিক সহযোগিতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতামত আমলে নিয়েই আমরা এ বিষয়ে পূর্বকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে চাইছি।’

তবে ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, ইয়েমেনের অমানবিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হুথিদের সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়া বা সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মানে এই নয় যে হুথিদের সম্পর্কে এবং তাদের ‘নিন্দনীয় আচরণ’নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বদলে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি দুজারিক এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাবকে স্বাগত জানাই। সত্যিই যদি এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে লাখ লাখ ইয়েমেনী, বর্তমানে যাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী, তাদের ওপর থেকে বড় একটি চাপ সরে যাবে।’

ইয়েমেনের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের এই মুহুর্তে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দরকার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ; সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযান ও অবরোধের কারণে দেশটিকে এই ভয়াবহ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এদিকে বাইডেন প্রশাসনের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্রিস মারফি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘(হুথিদের) সন্ত্রাসী তকমা দেওয়ায় ইয়েমেনের ভেতর খাবার ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল; এটি সম্ভবত কার্যকর রাজনৈতিক মধ্যস্থতার পথেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত।’

এসএমডব্লিউ