মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলল জাতিসংঘ
ইয়াঙ্গুনে স্বৈরশাসনবিরোধী বিক্ষোভের সময় প্রতিবাদকারীরা তিন আঙুল উঁচিয়ে অং সান সু চিকে স্যালুট জানান/ ছবি: এএফপি
ফের মিয়ানমারের বেসামরিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, চলতি সপ্তাহে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার এই যোগাযোগের সময় জাতিসংঘ দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ আটক অন্যান্য নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বলে খবর দিয়েছে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিস্টিন স্ক্রানার বার্গেনারের নাম উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, আজ আমাদের বিশেষ দূত প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি দেশটির অভ্যুত্থানে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বার্গেনার যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার পরিবেশ নিশ্চিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার সম্ভাব্য সবকিছুই করবো। যাতে মিয়ানমারের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসে।
সোমবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির মসনদে বসে সামরিক বাহিনী। মাত্র ১০ বছরের গণতন্ত্রের যাত্রার অবসান ঘটানো এই অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ পার্লামেন্টের ৪ শতাধিক সদস্যকে আটক করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যান্তনিও গুতেরেস। অন্যদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অং সান সু চির মুক্তি চাইলেও অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
কূটনীতিকরা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তে ভেটো দিতে সক্ষম চীন এবং রাশিয়া মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে আরও সময় নেওয়ার আহ্বান জানায়। যে কারণে জাতিসংঘের এই পরিষদ দেশটির আটক নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি তুললেও অভ্যুত্থানের নিন্দা জানায়নি।
স্বৈরাচার নিপাত যাক স্লোগানে উত্তাল ইয়াঙ্গুন
স্বৈরশাসনবিরোধী ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগানে স্লোগানে হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সম্প্রতি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি দাবি করছেন তারা। জেনারেলরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর মিয়ানমারে এত বড় বিক্ষোভ আগে হয়নি। তাই অনেকে একে নজিরবিহীন হিসেবেও অভিহিত করছেন।
#HAPPENING Protesters shouting "OUR POLICE, meant for public, PLEASE STAND WITH PUBLIC" as protesters being blocked during the anti-military protest in Yangon. #WhatsHappeningInMyanmar #Myanmar pic.twitter.com/sSnPwyMcfl
— Cape Diamond (@cape_diamond) February 6, 2021
সোমবার অভ্যুত্থানের পর বন্দি নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সামরিক জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক, হারবে, হারবে; গণতন্ত্র, জিতবে, জিতবে’। তারা যে পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সেখানে লেখা, ‘সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে’। অনেকে এনএলডির লাল পোশাক পরে ও লাল পতাকা নিয়ে এসেছেন।
অভ্যুত্থানের পর চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। এতে করে চলমান এই অসহযোগ আন্দোলন দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
ফেসবুক, টুইটারের পর ইন্টারনেট বন্ধ
সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমারে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের পর ইন্টারনেটও বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। শনিবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের পর ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। গত সোমবার সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর এ ধরনের প্রথম বড় বিক্ষোভ করলেন ইয়াঙ্গুনে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সামরিক স্বৈরশাসক, ব্যর্থ, ব্যর্থ’, ‘গণতন্ত্র, জয়, জয়’ স্লোগান দেন; তাদের হাতে ‘সামরিক স্বৈরশাসক নিপাত যাক’ ব্যানারও দেখা যায়। ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবার ও পানি সরবরাহ করেন।
বিক্ষোভে অনেকের পরনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) পতাকার রং লালের আদলে পোশাক দেখা যায়।
গত বছরের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির এই দল ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়।
চাপা ক্ষোভের মাঝে লোকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রচারণা শুরু করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের ডাক দেয়। বিক্ষোভকারীদের প্রচারণা ঠেকাতে শনিবার দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার।
চলমান অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশটির রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ অন্যান্য শহরের ৭০টি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সামরিক সরকারের অধীনে তারা চিকিৎসাসেবা দেবেন না। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
এসএস