চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যন্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চীনের শীর্ষ কূটনীতিক এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পররাষ্ট্রবিষয়ক সহকারী ইয়াং জিয়েচি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।

শুক্রবারের ওই ফোনালাপের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতি অনুযায়ী ফোনালাপে ব্লিনকেনকে জিয়েচি বলেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমাগত খারাপ হওয়ার জন্য ওয়াশিংটন দায়ী। একইসঙ্গে জিনজিয়াং ও হংকংয়ে বেইজিংয়ের নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনাও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পররাষ্ট্রবিষয়ক সহকারী ইয়াং জিয়েচি

ইয়াং জিয়েচি বলেন, হংকং, জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় এবং তিব্বত একান্তই চীনের নিজস্ব বিষয়। এ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ আমরা সহ্য করবো না।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি বন্দিশিবিরে সংখ্যালঘু উইঘুরসহ অন্য মুসলিম নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের মতে, এ ধরনের সংঘটিত নৃশংসতার পরিণতি গুরুতর হতে পারে।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দি শিবিরে উইঘুর মুসলিমসহ অন্য নৃগোষ্ঠীর নারীদের নিয়মিতভাবে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুতর পরিণতি ডেকে আনে।’

শুক্রবারের ওই ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিয়েচি বলেন, ‘লড়াই ও একে-অপরকে মোকাবিলার মনোভাব বাদ দিয়ে এবং সাম্প্রতিক ভুল সিদ্ধান্তগুলো শুধরে নিয়ে ওয়াশিংটনের উচিত বেইজিংয়ের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ফোনালাপের সময় উভয় দেশের মৌলিক স্বার্থগুলো পারস্পারিক সমর্থনের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার মনোভাবের ওপর জোর দেন জিয়েচি। তিনি বলেন, দুই পক্ষেরই উচিত একে-অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে সম্মান করা।

এদিকে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে আলাপের পর টুইটারে দেওয়া বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের জাতীয় স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখবে এবং আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ অমান্য করায় বেইজিংকে দোষী সাব্যস্ত করবে বলে আমি তাদের (চীন) স্পষ্ট করে জানিয়েছি।

চীনের কর্মকর্তাকে ব্লিনকেন জানান, জিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকংয়ের মানবাধিকার ও তাদের মূল্যবোধকে বজায় রাখতে পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে নিন্দা জানাতে চীনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাপ দিয়েছেন বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ এই কূটনীতিক।

সম্প্রতি জিনজিয়াংয়ে মুসলিম নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। জিনজিয়াং রাজ্যের বন্দিশিবিরে ছিলেন এমন মানুষ ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দি নারীদের পরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়টি তারা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এর প্রমাণ দেখেছেন।

বেইজিং অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। চীন সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, মুসলিমদের মধ্যে চরমপন্থা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ ঠেকাতে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব মানুষকে ‘সুপথে’ ফেরানোর কাজ করছে তারা।

সূত্র: সিএনএন, ভয়েস অব আমেরিকা

টিএম