পরমাণু চুক্তিতে দ্রুত ফিরতে বাইডেনকে তাগিদ ইরানের
২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি ও তেহরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে দ্রুত ফিরে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি বলেছেন, চলতি মাসের মধ্যে তেহরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না উঠলে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব পাস করেছে ইরানি পার্লামেন্ট। এর ফলে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে বাধ্য হবে সরকার।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ইরানের হামশাহরি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। এমনকি আগামী জুন মাসে ইরানে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি কোনো কট্টরবাদী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে এই পরমাণু চুক্তি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞাপন
জাভেদ জারিফ বলেন, ‘দুটি কারণে (চুক্তিতে ফেরার জন্য) আমেরিকার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি হচ্ছে- পার্লামেন্টে পাস হওয়া নতুন বিল এবং অন্যটি ইরানে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচন।’
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বরে ইরানের পার্লামেন্ট একটি নতুন আইন পাস করে। আইন অনুযায়ী- দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না উঠলে, পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করতে হবে প্রেসিডেন্ট রুহানির সরকারকে।
এর আগে ইরানের পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন নেই বলে চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। পরমাণু বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন করা থেকে ইরান মাত্র কয়েক মাস দূরে রয়েছে- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের এমন মন্তব্যের পর দেশটি একথা জানায়।
গত সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইরানের পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। আমরা চাইলে বেশ কিছুদিন আগেই এই অস্ত্র তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু আমরা পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এই অস্ত্র আমাদের নিরাপত্তা বাড়াবে না এমনকি এটা আমাদের আদর্শিক চিন্তাধারার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।’
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখতে বাধ্য হয় ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান।
যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দেশটি।
তবে গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় পরাশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন জো বাইডেন।
অবশ্য সিএনএন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাভেদ জারিফ জানিয়েছিলেন, পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ‘অসীম’ সময় নেই। তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে এই চুক্তিতে ফিরে আসার ঘোষণা দিতে হবে। এরপরই তাৎক্ষণিকভাবে ইরানও এই চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে সম্মতি দেবে।’
ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম