পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে বাইডেনকে চিঠি সাবেক কূটনীতিকদের
ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তি জ্যাকোপায় ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ৪১ জন সাবেক কূটনীতিক ও সেনা কর্মকর্তা। রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চিঠিতে সাবেক কূটনীতিক ও সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় ফিরিয়ে নিতে বাইডেন প্রশাসনের উচিত সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো।
বিজ্ঞাপন
ইরানকে পরমাণু প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই ছয় স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ২০১৫ সলে পরমাণু চুক্তি বা জ্যাকোপা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তির শর্ত ছিল - ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে- এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্টের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রত্যক্ষ উদ্যেগেই সম্ভব হয়েছিল এই সমঝোতা চুক্তি, যাকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা, সেখানে ইরানকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল- পরমfণু প্রকল্প থেকে সরে এলে দেশটির ওপর থেকে একে একে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ'র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারেও তখন সম্মতি দিয়েছিল তেহরান।
কিন্তু এরপর ওবামার উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে জ্যাকোপা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান এবং ইরানের ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানো ইত্যাদি সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যমে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ইরান সরকারের আর্থিক হিসাবগুলো জব্দ হয়ে যায়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানিতেও সমস্যায় পড়ে ইরান।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিকবার আমেরিকাকে পরমাণু সমঝোতায় ফিরিয়ে আনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা হাজির করেনি বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেনের প্রশসানের কর্মকর্তারা অবশ্য অস্পষ্ট বক্তব্যে বলছেন, তারা পরমাণু সমঝোতাকে আরো দীর্ঘমেয়াদি ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এই সমঝোতায় ফেরত আসার বিষয়ে দেরি করছেন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতায় পুরোপুরি ফিরে আসার জন্য এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
কিন্তু সম্প্রতি ইরান ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করেছে যা পরমাণু সমঝোতায় দেয়া সাড়ে তিন শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে জ্যাকোপাতে স্বাক্ষর করা অন্যান্য দেশগুলো।
সূত্র: স্পুটনিক
এসএমডব্লিউ