আকাশে উড়তে কে না চায়? সেই চাওয়াটা যদি পেশায় পরিণত করা যায়, তবে মন্দ হয় না। দরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও যোগ্যতা সম্পন্ন যেকেউ এ পেশায় আসতে পারেন। কিন্তু কোথায় প্রশিক্ষণ নিতে হবে, কিইবা যোগ্যতা থাকা চাই, সে বিষয় অনেকেরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই। চলুন তাহলে জেনে নিই পাইলট হতে কি যোগ্যতা লাগে-

পাইলট সাধারণত দুই ধরনের, সামরিক ও বেসামরিক। সামরিক পাইলট বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। বেসামরিক পাইলটরা বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে কর্মরত থাকেন। তবে পাইলট হওয়ার জন্য থাকতে হবে বেশ কিছু যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চালানোর যাবতীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB। এর অধীনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আপনার পাইলট হওয়ার পথ সহজ করে দেবে।

আরও পড়ুন> চাকরির আবেদনপত্র লিখবেন যেভাবে

কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে

সাধারণত পাইলট হতে চাইলে প্রাথমিকভাবে কিছু বেসিক কোর্স করতে হয়। বর্তমানে এই কোর্সটি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করিয়ে থাকে। তবে এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন। এরমধ্যে অন্যতম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। ইতিমধ্যে যারা স্নাতক পাশ করেছেন তারাও পারবেন পাইলট কোর্সে আবেদন করতে। এক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে। শারীরিক ভাবে ফিট ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে।

পাইলট কোর্স কি ও কেন করতে হবে?

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে, চাইলেই পাইলট কোর্স করা সম্ভব। কিন্তু এ কোর্সটি করতে চাইলে আগে সংশ্লিষ্ট একাডেমীতে  পাইলট কোর্সের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে পাইলট কোর্সের সুযোগ। সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় তিনটি ধাপে। প্রথমে দিতে হয় লিখিত পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হলে মৌখিক এবং চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগে দিতে হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু একাডেমীতে এসবের সঙ্গে কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতাও পরখ করে দেখে।

আরও পড়ুন> এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ : ইয়েস্টারডে, টুডে অ্যান্ড টুমোরো

পাইলট কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেলেই শুরু হবে মূল প্রশিক্ষণ। কোর্সটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গ্রাউন্ড কোর্স, প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ও কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। পুরো কোর্সটি শেষ করতে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় লাগে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুলাই-আগস্ট দুটি সেশনে বৈমানিক কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। গ্রাউন্ড কোর্সে সাধারণত থিউরি শেখানো হয়। যেমন- বিমানের কারিগরি, এয়ার ল, এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফ্লাইট পারফরম্যান্স অ্যান্ড প্লানিং, হিউম্যান পারফরম্যান্স অ্যান্ড লিমিটেশন, ন্যাভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর ও প্রিন্সিপাল অব ফ্লাইট সম্পর্ক ধারনা দেওয়া হয়।

এরপর সিভিল অ্যাভিয়েশনে স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি) পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এসপিএল দেয়া হয়। এ লাইসেন্স দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালনার অনুমতি মেলে। এরপরই পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। এসময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বিমান চালিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। তারপর মেলে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। যদিও এ লাইসেন্স দিয়ে বাণিজ্যিক বিমান চালানো যাবে না। বাণিজ্যিক বিমান চালানোর জন্য দরকার সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এটি থাকলে পাইলট হিসেবে যে কোন এয়ারলাইন্সে চাকরি করা যাবে। এ লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে দেড়শ থেকে দু’শ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

আরও পড়ুন> আপনিও হয়ে যেতে পারেন আকাশকন্যা

পাইলট কোর্স কোথায় ও কিভাবে করবেন?

Civil Aviation Authority of Bangladesh (CAAB) এর অধীনে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ কোর্সটি করিয়ে থাকে। যেমন:

১। সিভিল অ্যাভিয়েশন একাডেমী ট্রেনিং সেন্টার;

২। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার;

৩। বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী অ্যান্ড ফ্লাইং অ্যাভিয়েশন লিমিটেড;

৪। আরিরাং অ্যাভিয়েশন লিমিটেড;

৫। গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমী অন্যতম।

এছাড়া বিদেশী প্রতিষ্ঠান থেকেও নেওয়া যাবে এ ধরনের প্রশিক্ষণ।

আরও পড়ুন> ঝামেলা ছাড়াই সার্টিফিকেট সংশোধনের উপায় 

কোর্স ফি ও খরচাপাতি কেমন?

দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাইলট কোর্সটি করার জন্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হবে। টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ভেদে বাড়তে বা কমতেও পারে। তবে পাইলট কোর্সের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নিয়েই এ কোর্সটিতে ভর্তি হওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় টাকার জন্য রিয়েল টাইম ফ্লাইং আটকে যায়। যে ক্ষেত্রে কোর্সটি সম্পন্ন করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি লাগে।

কোর্স শেষে কোথায় কাজ করবেন?

এক জন পাইলট সরকারি ও বেসরকারি যেকোন এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে পাইলট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ বিমানসহ ইউএস বাংলা, নভো এয়ার,  রিজেন্ট, ইউনাইটেডের মত এয়ারলাইন্স প্রতিবছরই লোক নিয়োগ করে থাকে। এদের ওয়েবসাইটে সিভি ড্রপ করারও অপশন রয়েছে। এছাড়াও কাজ করা যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১৭ হাজার নতুন পাইলট প্রয়োজন।

আরও পড়ুন> লিংকডইনের মাধ্যমে চাকরি খুঁজবেন যেভাবে

রয়েছে উচ্চ বেতন ও সুন্দর ভবিষ্যৎ

একজন পাইলট প্রাথমিক অবস্থায় দুই লাখ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। প্রতি বছর বেতনের অংক বাড়তে থাকে। সঙ্গে দেশ বিদেশ ঘুরার সুযোগ তো থাকছেই। এছাড়াও একজন পাইলট সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।