২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল।

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩ দফা দাবিতে নেওয়া ওই কর্মসূচি থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর চালানো হয় ব্যাপক তাণ্ডব।  

আট বছর আগে ওই ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে চারটির অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও তদন্ত আটকে আছে ৪৯টি মামলার। 

৮ বছরে এ মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন,‘তদন্ত শেষ হলে মামলাগুলোর অভিযোগপত্র খুব দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে।’অন্যদিকে, হেফাজতের আইনজীবীর দাবি, দীর্ঘ আট বছরেও এ মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া খুবই দুঃখজনক।

যে ৪৯টি মামলা তদন্তে আটকে আছে তার মধ্যে ১৭টি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং ৩২টি পল্টন ও মতিঝিল থানা পুলিশের হাতে রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে যে নাশকতা হয়েছে সেসব ঘটনায় নতুন করে হেফাজতের বিরুদ্ধে আরও ১২টি মামলা হয়েছে। ফলে হেফাজতের বিরুদ্ধে মোট ৬৫টি মামলার মধ্যে ৬১টি মামলা তদন্তাধীন এখন। 

এসব মামলায় হেফাজতে ইসলামের ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৩ সালের মামলার সঙ্গে চলতি বছরের মামলায়ও পুলিশ হেফাজত এ  নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। 

মাঝে কিছুদিন হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোতে পুলিশ কিছুটা নীরব ভূমিকায় থাকলেও মোদিবিরোধী বিক্ষোভের পর হেফাজতের বেশ কজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন, নতুন মামলার সঙ্গে যাদের পুরোনো মামলাতেও গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।   

সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফউল্লাহকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-। মুফতি শরীফউল্লাহ হেফাজতের মহানগর কমিটিরও সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে তার লালবাগের নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৬ এপ্রিল বিকেলে লালবাগের বাসা থেকে হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমেদকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একই দিনে(১৬ এপ্রিল) রাজধানীর বারিধারা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়। 

গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৮ এপ্রিল দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। 

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনায় দীর্ঘ ৮ বছর তদন্ত শেষ না করে পরবর্তীতে এ সময় এসে পুরাতন মামলায় এ আসামিদের গ্রেফতার করাটা খুবই দুঃখজনক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ তারা যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। মিথ্যা বা ষড়যন্ত্রের শিকার যেন কোনো আসামি না হয়। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। মামলাগুলোতে অনেক আসামি গ্রেফতার রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদও চলছে। তদন্ত শেষে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’

টিএইচ/এনএফ