হাইকোর্টের সংগৃহীত ছবি

দেশের সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ বাতিলসহ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

তবে আপিল বিভাগ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের নির্দেশনা বিষয়টি স্থগিত করেননি।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর লিভ টু আপিল গ্রহণ করে রোববার (০৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হাসান।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ মে দেশের সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ বাতিল করে ৩ মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া বাংলা ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার ওপর জোর দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।

রায়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ সব জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের নির্দেশও দেওয়া হয়।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সার্কুলার দিয়ে সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া আদালত রায়ে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেন।

নির্দেশনাগুলো হলো- বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে। পেছনের দরজা দিয়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না। এক শ্রেণিতে থেকে অন্য শ্রেণিতে ওঠার সময় কোনো ধরনের পুনঃভর্তি ও সেশন চার্জ নেওয়া যাবে না। কোনো ধরনের ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধির মতামত প্রাধান্য পাবে।

সব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী রবীন্দ্র-নজরুল, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতায় আত্মদানকারীদের জীবনী নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা বিষয়ে পড়া, লেখা ও বলায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।

পরে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে গ্রীনডেল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাভেদ ফারুক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিটে শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও দেশের সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়।

এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত একই বছরের ২৩ এপ্রিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্লে গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে কেন শিক্ষা বিধিমালা গঠন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবাদীদের মনিটরিং সেল গঠনের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

এমএইচডি/জেডএস