ভাস্কর্য ইস্যুতে খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান
ভাস্কর্য ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালত এ আদেশ দেন
বিজ্ঞাপন
এর আগে ৯ ডিসেম্বর একই আদালতে মামলাটি দায়ের করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। এরপর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ইসলামিক শাসনতন্ত্রের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম।
বিজ্ঞাপন
মামলার অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের একটি আলোচনা সভায় সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কোনো ধরনের ভাস্কর্য থাকবে না এবং জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মদিনার সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো প্রকার ভাস্কর্য থাকতে পারবে না। ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ না করলে আরও একটি শাপলা চত্বর ঘটাবেন বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে ইসলামিক শাসনতন্ত্রের একটি জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ফয়জুল হক বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো ভাস্কর্য তৈরি করা হয় তাহলে সব ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আবারও শাপলা চত্বরে মানুষের জমায়েত হবে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগেও হেফাজতের পক্ষ থেকে শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের সমসাময়িক সময়ে খালেদা জিয়া ১৪ দলের এক সমাবেশে বলেছিলেন, সকাল ৬টার মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটাবেন। তোমরা সেভাবে কাজ চালিয়ে যাও। তারপর বাবুনগরীর হুকুমে হেফাজতে ইসলামের জঙ্গিবাদীরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অগ্নিসংযোগ করে পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই এই উগ্রপন্থী স্বাধীনতাবিরোধীরা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জাতির পিতা, দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয়প্রতিপন্ন করছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত গোষ্ঠী জামায়াত, আলবদর, রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীরা পরাজিত হয়ে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় নেতৃত্ব দানকারী তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ইসলামিক সংগঠন জামায়াত-শিবিরসহ উগ্রপন্থী ইসলামিক দলগুলো স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার জন্য অপকর্ম, বিশৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার ইতিহাস ও জাতির পিতার স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য অপপ্রচার চালিয়ে দেশে জনগণের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। ফলে স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এরপর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানি দালালেরা কৌশলে একের পর এক দেশবিরোধী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট পাকিস্তানি দালাল চক্র বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই জঙ্গবাদীদের সঙ্গে ঐক্যজোট করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য তার ছেলে তারেক রহমানের মাধ্যমে জঙ্গিদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা করে। এতে আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
সেখানে আরও বলা হয়, এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে ভয়াবহ পেট্রোল বোমা মেরে হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে হত্যা করে। এমতাবস্থায় আবার এই স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের দালাল চক্র খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ইসলামিক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী জাতির পিতার ভাস্কর্য বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপ ও সংঘাত সৃষ্টি করে। তাদের গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার ভাস্কর্যের একটি হাত ভেঙে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ভাস্কর্যের একটি কান ভেঙে দেয়।
তাই বাদী মনে করেন, যে পিতার (শেখ মুজিবুর রহমান) নেতৃত্বে এই দেশের জন্ম হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে সেই পিতার হাত ভেঙে এই বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামিক শাসসনতন্ত্রসহ এসব ইসলামিক সংগঠনগুলো যারা দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করে পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করে এবং স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার নাম এই দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলতে চায়। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০/৫০৬/১০৯ ও ৪২৭ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক।
টিএইচ/এফআর