বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙচুরের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএসএমএমইউর ২নং গেটে উপাচার্যের রুমের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভাঙা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৯ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এ মামলা দায়ের করেন। ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা যখন ঘটে তখন তিনি বিএসএমএমইউতে সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে চিফ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ থেকে অবসরে যান।

অধ্যাপক এম এ মান্নানসহ মামলার আসামিরা হলেন- বিএসএমএমইউ-এর তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ, বাবুল ওরফে ধোপী বাবুল, তাজুল ইসলাম (ওয়ার্ড বয়), আখতারুজ্জামান (টেলিফোনে অপারেটর), আবুল কাশেম (তৎকালীন ওয়ার্ড বয়), আব্দুল মতিন (তৎকালীন টেলিফোনে অপারেটর), কবির হোসেন লস্কর, মোহাম্মদ হোসেন (তৎকালীন কুক, খাদ্য বিভাগ), বিলকিছ জাহান চৌধুরী (তৎকালীন সিনিয়র নার্স), আফজাল হোসেন, জয়নাল আবেদীন (তৎকালীন গাড়িচালক), নজরুল ইসলাম (তৎকালীন দারোয়ান), জুনুন রেজা (তৎকালীন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট), ইসমাইল হোসেন (কম্পিউটার অপারেটর), আমজাদ হোসেন (তৎকালীন গাড়ি চালক), জাহাঙ্গীর আলম জুনায়েদ (এমএলএসএস), শাইফুল ইসলাম শাহীন (তৎকালীন ওয়ার্ড বয়), আশ্রাফ আলী (তৎকালীন গার্ড), রফিকুল্লাহ (তৎকালীন সরদার), আমান উল্লাহ (তৎকালীন সরদার), মোফাজ্জল (ওয়ার্ড বয়), মোস্তফা (তৎকালীন সুইপার) ও জেড এম মামুন ওরফে বাবু (তৎকালীন ক্যাথ ল্যাব সহকারী)।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০ টায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক মদদে নারকীয় কায়দায় বিএসএমএমইউতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। এ মামলার আসামিরা সে রাতে শাবল, কুড়াল, হাতুড়ি, বাঁশের লাঠি, হকিস্টিক ও লোহার পাইপ দিয়ে ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও ভাস্কর্যে লাথি দিয়ে তারা অসম্মান ও চরম অবমাননা করে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালীন হাসপাতালে বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে ঝুলানো বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলোও ফ্লোরে ফেলে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় তারা ছবিতে আলকাতরা লাগিয়ে দেয় এবং গালমন্দ করতে থাকে। সেসময় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানা মামলা নেয়নি।

২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ এক অফিস আদেশের মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয় অধ্যাপক ডাক্তার আবু শফি আহমেদ আমিনকে। সদস্য সচিব করা হয় মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সিদ্দিককে এবং ডা. মো. মনিরুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়। তদন্ত শেষে এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে মামলার আসামিরা অত্যন্ত ক্ষমতাশীল কুচক্রীমহলের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটির এ সুপারিশ ধামাচাপা দিয়ে রাখে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

বাদী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঘটনার রাতে আমি চা খাইতে হাসপাতালের নিচে যাই। তখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করতে দেখি। মামলার এজাহারে যাদের নাম আছে তাদের সঙ্গে আরও কিছু মানুষকে তখন দেখি, যাদের নাম জানি না। সে সময় আমি ভাঙচুরের প্রতিবাদ করলে আসামিরা আমাকে মারধর করে। ভাঙচুরে বাধা দেয়ায় আরও কিছু মানুষকে তারা মারধর করেন। পরে আমাকে হাসপাতালের একটি রুমে সারারাত আটকে রাখেন। আমি যেন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারি সেজন্য ওই রুমের টেলিফোনের লাইনটিও কেটে দেয় আসামিরা। পরেরদিন সকালে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।’

বাদী আরও বলেন, ‘ওইদিন আসামিরা আমাকে নির্যাতন করেছে সেটার জন্য আমার দুঃখ নেই। কিন্তু জাতির জনকের ভাস্কর্য ভেঙে এবং হাসপাতালের বিভিন্ন রুমে থাকা তার ছবি ভেঙে আলকাতরা লাগিয়ে যেভাবে অপমানের চেষ্টা করা হয়েছে সেই দুঃখ ভুলতে পারি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে চরম অপমান ও লজ্জাবোধ করি। আমি আসামিদের শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীরা বাধাপ্রদানকারীদেরকে নির্মমভাবে মারধর করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে মারধরের সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু পরে আর মামলা হয়নি। আমরা চাই, ওই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক।’

টিএইচ/এফআর