নির্দোষ আরমানের কারাভোগ : ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে আদেশ বহাল
হাইকোর্টের ফাইল ছবি
পুলিশের ‘ভুলে’ বেনারসি কারিগর নির্দোষ মো. আরমান চার বছর কারাভোগের ঘটনায় পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত।
একইসঙ্গে আরমানকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) দেওয়া আদেশের শুনানির জন্য সোমবার (১১ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১০ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জমান এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। চার পুলিশ সদস্যের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। আরমানের মায়ের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সঙ্গে ছিলেন- ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
বিজ্ঞাপন
ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানী মিরপুরের পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে গত ৩১ ডিসেম্বর মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া মো. আরমানকে আসামি করার ঘটনায় জড়িত পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে যুক্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তারা হলেন- পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম খান ও মো. রাসেল।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর ধরে কারাগারে থাকা পল্লবীর বেনারসি কারিগর আরমানকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে নির্দোষ মো. আরমানকে চার বছর কারাগারে রাখায় কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়।
একই বছরের ২১ এপ্রিল নির্দোষ আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবীর ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক ঘাটের জল পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালমকাণ্ড বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিন বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। শুধু পিতার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রশ্ন জেগেছে, এটি কি পুলিশের ভুল, নাকি সচেতন অপরাধ? উৎকোচের বিনিময়েই কি প্রকৃত মাদক কারবারিকে রক্ষার অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে? যদি তা-ই হয়, তবে এ ঘটনায় কে কে দায়ী? তাদের আইনের মুখোমুখি করা সম্ভব কি?
সেখানে আরও বলা হয়, একদিকে যখন এসব প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে তখন নির্দোষ কারাবন্দি আরমানের দরিদ্র মা, স্ত্রী আর সন্তানের যাপিত জীবন হয়ে পড়েছে মানবেতর। পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে মৃত ইয়াছিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ তিন বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মো. আরমান (৩৬)। শুধু পিতার নামে (মৃত ইয়াছিন) মিল থাকায় শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন-১০ তেজগাঁও নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃগীরোগী আরমানকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে।
এমএইচডি/এফআর