মানবপাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতে কারাদণ্ড পাওয়া এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে এবার সনদ জালিয়াতির মামলা দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এমপি পাপুলের সনদ জালিয়াতি নিয়ে রিট মামলার আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বলেন, পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের মামলা দ্রুত শুনানির জন্য রোববার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টে আবেদন করা হবে। মানবপাচার মামলায় কুয়েতে চার বছরের সাজার রায়ও হাইকোর্টকে দেখানো হবে বলে জানান তিনি।

গত বছরের ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে তার সংসদীয় আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান ও মো.সালাহ উদ্দিন। 
রিটটি দায়ের করেন ওই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া।  

আইনজীবী জানান, শিক্ষাগতযোগ্যতা নিয়ে নির্বাচনী হলফনামায় পাপুল মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় স্নাতকোত্তর উল্লেখ করে জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এ মিথ্যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২(সি) এর লংঘন। তাই আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া রিট করেছেন। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন।   
 
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পাপুল প্রতারণা, জালিয়াতি করে শুধু অবৈধ সম্পদই অর্জন করেননি। তিনি জালিয়াতি করে ভুয়া শিক্ষাগত সনদও জোগাড় করেছেন। তিনি সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স বিষয়ে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৭। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, পাপুল যে বিষয়ের ওপর স্নাতক সনদ জোগাড় করেছেন কলেজটিতে ওই বিষয়ের ওপর কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপুল ২০১৬ সালে কুয়েত থেকে নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুর ফিরে  ‘লক্ষ্মীপুর২৪ডটকমে’ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এটি প্রকাশ করা হয় একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি বলেছেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ১৯৯২ সালে। সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজের নামে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও এর আগে ১৯৮৭ সালে স্নাতক পাসের তথ্যের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাব তাকে বিতর্কিত করেছে। নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন বলে ওই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন।’

গত বছরের ৬ জুন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেপ্তার করেন। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনেছে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে গত ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন কুয়েতের আদালত। ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

এমএইচডি/জেডএস