‘দুর্নীতিবাজদের জনগণের আদালতে দাঁড় করানোর এখনই সময়’
দুর্নীতিবাজদের জনগণের আদালতে দাঁড় করানোর এখনই সময় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করেন। যা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
‘সাভার থানা অসহায় পরিবার পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. বনাম বিজ্ঞ জজ, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপিল ট্রাইব্যুনাল ঢাকা ও অন্যান্য’ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং প্রবাসীদের কষ্টের টাকা আমাদের মতো রাষ্ট্রের বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, বিচারপতি, সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর অন্ন সংস্থানের মাধ্যম। শ্রমিক ভাই-বোনদের কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ, পড়ালেখাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হয়।’
বিজ্ঞাপন
‘আমরা যেন আমাদের নিজ-নিজ দায়িত্ব সৎভাবে, দক্ষতার সঙ্গে এবং নিরপেক্ষতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে পালন করতে পারি, এজন্যই মেহনতি শ্রমিক ভাই-বোনরা আমাদের মতো বেতনভোগীদের তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রদান করেন। তারা কোনোদিন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং দেশের সম্পদ লুট করার মতো কাজ করেন না।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘দেশের সম্পদ লুটতরাজ করে হাতেগোনা কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। দুর্ভাগ্যবশত কিছু সংখ্যক বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কৃষক-শ্রমিকদের সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতে লিপ্ত হয়। শ্রমজীবী মানুষের রক্ত পানি করা অর্থ কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। জনগণের বেতনভোগী এসব দুর্নীতিবাজ সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক, বিচারপতিদের জনগণের আদালতে দাঁড় করানোর এখনই সময়। তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সম্পত্তি দেখ-ভালের সর্বশেষ স্তরে জনগণ বিচারকদের ওপর আস্থা রেখেছেন। সুতরাং বিচারকদের গুরুদায়িত্ব হলো- জনগণের সম্পত্তি যেন কোনো জোচ্চোর, ঠগ, বাটপার ও জালিয়াত চক্র গ্রাস করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা।’
বিজ্ঞাপন
এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যেকোনো মামলার বিষয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণগুলো যথেষ্ট যুক্তিসম্পন্ন হতে হবে। যুক্তিহীন রায় বিচার বিভাগকে জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণগুলো যুক্তিসম্পন্ন না হলে, সে সিদ্ধান্ত বা রায় জনমনে আস্থাহীনতার সৃষ্টি করে। বিচারকের প্রজ্ঞা ও সততা ছাড়া মানসম্মত বিচার ব্যবস্থা কল্পনা করা যায় না। বিচারকের প্রজ্ঞা-সততা এবং রায় প্রদানের কারণগুলো যদি যুক্তিসম্মত ও নৈতিকতাসম্পন্ন না হয়, তবে সে বিচার ব্যবস্থা উন্নত বিচার ব্যবস্থায় নিজেকে কখনই অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে না।
রায়ে আরও বলা হয়, বিচারকের রায় হবে সহজ-সরল মাতৃভাষায় তথা বাংলা ভাষায়। সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণগুলো হবে শ্রেষ্ঠ যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ও বিচারিক বিবেচনাপ্রসূত। একজন সহজ-সরল সাধারণ মানুষ পড়ে যেন আদালতের রায় বা সিদ্ধান্তের কোনো ভুল ধরতে না পারে।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
এমএইচডি/এমএইচএস