দ্রুত বিচার করে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা, আপোস না করা এবং সহিংসতার শিকার নারীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগ্রহণসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ। নারী ও কন্যার প্রতি ধর্ষণসহ সব ধরনের সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

রোববার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ঘরে-বাইরে, বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত নারী ও কন্যারা অব্যাহত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা এবং যৌন নিপীড়নের মতো সহিংসতার শিকার হচ্ছে। একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিপরায়ণ, স্বার্থান্বেষী অপরাধীচক্র, সাম্প্রদায়িক ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে সমাজ জিম্মি হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। যা আমাদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতায় আঘাত হানে।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা সমাজকে কলুষিত করছে। শিশু, কিশোর, তরুণদের একাংশ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করছে। বহুলাংশে সমাজের উদাসীনতায় বে-আইনি সালিশের মাধ্যমে মিটমাটের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষকের সাথে বিয়ের ঘটনা ধর্ষণের মতো অপরাধের গুরুত্ব লঘু করে সমাজে অন্য বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে।’
 
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ ঘরে, বাইরে, কর্মক্ষেত্রে কোথাও নারী নিরাপদ নয়, যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পাশাপাশি নারীর সার্বিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। নারী ও কন্যার প্রতি নৃশংস নির্যাতনের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধ সংগঠনকারীরা বেপরোয়া এবং তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।’

‘সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘঠিত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতি নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষকের সর্বোচ্চশাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সারা দেশে তরুণ-কিশোর সমাজ মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন কিশোর অপরাধী চক্র তৈরি হচ্ছে। এরা ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ধর্ষকরা প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থাকে, যা দেশের সুশাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। ঘটনার শিকার নারী, কন্যা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানানো হয়। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতা ও নির্মম নির্যাতনের ঘটনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করাসহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

ছয় দফা দাবি

১. দ্রুত বিচার করে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. ধর্ষণের ঘটনা আপোস করা চলবে না।

৩. ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেওয়া চলবে না।

৪. ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুকে দোষারোপ বন্ধ করতে হবে।

৬. রাষ্ট্রকে সহিংসতার শিকার নারীকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুরক্ষা দিতে হবে।
 
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নাগরিক সমাজের সদস্যবৃন্দরা হচ্ছেন- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, হাশেম খান, ডা. সারোয়ার আলী, সৈয়দ আবুল মকসুদ, বেগম মুশতারী শফী, রামেন্দু মজুমদার, সেলিনা হোসেন, মামুনুর রশিদ, জেড আই খান পান্না, সামন্তলাল সেন, আবুল মোমেন, মফিদুল হক, শাহরিয়ার কবীর, ড. মিজানুর রহমান, ড. শাহদীন মালিক,অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, অ্যাড. এস এম সবুর, মাহবুব জামান, অ্যাড. জেয়াদ আল মালুম, সঞ্জীব দ্রং, হাসান আরিফ

জেইউ/এইচকে