রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার নিশ্চিতে সবার সহযোগিতা দরকার
মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনী দেশটির নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং গণহত্যার চালিয়েছে তার জবাবদিহিতা এবং বিচার নিশ্চিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর করিম এ খান।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর।
বিজ্ঞাপন
আইসিসির প্রসিকিউটর এবং তার দল ওই আদালতে রোহিঙ্গা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ কাজের জন্য যখন যেখানে প্রয়োজন যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন তারা। এ কাজে বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর।
করিম এ খান বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছি এবং সামনে আবার আসব। শুধু বাংলাদেশই নয়, এই নির্যাতন এবং অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে যখন যেখানে প্রয়োজন যাব। এই বিচার নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। যাদের কাছে এই অপরাধের তথ্য-প্রমাণ আছে তাদের বলব, আমাদের সেগুলো দিয়ে সহযোগিতা করতে। যারা এই অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী তাদের মুখ খুলতে হবে।
বিজ্ঞাপন
সবাই মিলে কাজ করলে এই অপরাধের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করছেন আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর করিম এ খান বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খুব উদার এবং মানবিক। তিনি রোহিঙ্গাদের মন্দ দিনে তাদের আশ্রয় দিয়ে উদার মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ সফরে এসে আমি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। সবাই আমাকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছি। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একাধিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেছি। রোহিঙ্গা নেতা, ইমাম, যারা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের অনেকের সঙ্গেও আলাপ করেছি। কথা বলেছি ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা সদস্যদের সঙ্গে। পাশাপাশি আমার সঙ্গে আমার দলও রোহিঙ্গা নির্যাতনের তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করছে।
রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কি ধরনের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে আইসিসি— জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সেটা আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করব। আমরা প্রকৃত তথ্য-প্রমাণ দিয়েই আদালতের মাধ্যমে এ নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। তদন্তের স্বার্থে আমাদের যোগাড় করা তথ্য-প্রমাণের কথা এখনই মিডিয়ায় বলতে চাই না।
গাম্বিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাইতে পারে না বলে মিয়ানমার আইসিসিতে অভিযোগ করেছে। যার শুনানি গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে, তা সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ হবে। এ তথ্য জানিয়ে আইসিসির চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের জন্য গোটা বিশ্বই ভোগান্তিতে ছিল। যা আমাদেরও কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে এই মামলার কাজ কাজ করছি।
কবে নাগাদ এ বিচার কাজ সম্পন্ন হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে আদালতের শুনানি এবং তথ্য-উপাত্ত দাখিলের ওপর। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দিনক্ষণ বলা যাবে না। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। হয়ত কিছুটা বিলম্ব ঘটতে পারে, কিন্তু ন্যায় বিচার নিশ্চিতে আমরা আশাবাদী।
আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে যে হত্যা, নির্যাতন ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা কেবল আবেগ নয়, তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। এ কাজে চলতি বছরই আবারও বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। মিয়ানমারে পটপরিবর্তনের ফলে কিছুটা জটিলতা হলেও আদালতের কার্যক্রমে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
এনআই/এসএসএইচ