দুর্নীতি চিহ্নিত করা ও সেই দুর্নীতি বন্ধে সরকারের ২৩ দপ্তর বা খাতে দেড় শতাধিক সুপারিশসহ ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এবারের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে ১৪টি খাত বা বিষয় ছাড়াও আরও ৯টি ইস্যু বা খাতভিত্তিক সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ওই বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, কমিশনার মোজাম্মেল হক খান ও এ এফ এম আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকের মুখোমুখি হন।

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে চিহ্নিত খাতগুলোর মধ্যে শিক্ষাখাত; স্বাস্থ্যখাত; ওষুধ শিল্প; স্থায়ী সিভিল সার্ভিস সংস্কার; ভূমি ব্যবস্থাপনা; পাসপোর্ট; আয়কর; কাস্টমস; ভ্যাট সংক্রান্ত; সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনা; নদী দখল; নিষিদ্ধ পলিথিনের আগ্রাসন; দুর্নীতিমুক্ত ভূমি রেজিস্ট্রেশন; ইটভাটা স্থাপন সংক্রান্ত; দীর্ঘমেয়াদি নৈতিকতার বিকাশে বিএনসিসি স্কাউটিং ও গার্লগাইডের কার্যক্রম; সরকারি পরিষেবা মধ্যস্বত্বভোগী; ওয়াসা; ন্যায়পাল নিয়োগ; পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। 

যদিও দুদক চেয়ারম্যান বলছেন, দুদকের করা সুপারিশ সেভাবে বাস্তবায়ন হয় না। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক অনেক সুপারিশ করে থাকে, এসব সুপারিশ কোথায় চলে যায় আমরা মনিটরিং করতে পারি না, কারণ আমাদের সেই জনবল নেই। মন্ত্রিপরিষদে এসব সুপারিশ পরীবিক্ষণ করতে আমরা অনুরোধ করেছি। রাষ্ট্রপতিকে আমরা বলেছি। আমাদের সুপারিশ সরকার দেখতে পারে। কিন্তু আমরা কখনও বলি না যে, আমাদের প্রতিটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন। আমরা বলি বিবেচনা নিয়ে আলোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য হলে করতে পারেন।

এ বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন আরও বলছে, বার বার গণমাধ্যম থেকে আমাদের প্রশ্ন করা হয়, কমিশন যেসব সুপারিশ করে তা সরকার বাস্তবায়ন করে না এবং কমিশনও মনিটরিং করে না। এ সমস্যা দূর করতে এ বছর আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে কমিশন প্রণীত সুপারিশ বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন মনে করে দুদক সংক্রান্ত বিষয় ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের, তাই দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন ও তা মনিটরিং করার ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ।

বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের লিজিং কোম্পানি, নন-ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, সমবায় সমিতি আইন অনুসারে পরিচালিত সমবায় ব্যাংক ও মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানিগুলোর ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে প্রচুর পরিমাণে অর্থের লেনদেন করে। দুদকে প্রায়ই অভিযোগ আসে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞাতআয়ের উৎস বহির্ভূত অর্থের লেনদেন হয়। দুদকের অনুসন্ধানেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। এসব সেক্টরেও বহুমাত্রিক দুর্নীতির সংক্রমণ ঘটেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার জন্য-গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের উৎস বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার প্রবর্তন করা জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে জ্ঞাতআয়ের উৎস বহির্ভূত অর্থের লেনদেন না হতে পারে- এ সংক্রান্ত একটি নীতমালা বা পরিপত্র জারি করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

শিক্ষার বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের বৈশ্বিক দায়িত্ব। এ প্রেক্ষাপটে দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যমান পাস মার্ক ৩৩ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা যেতে পারে। এছাড়া মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্মত শিক্ষকেরও কোনো বিকল্প নেই। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে নিয়মিত ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অঞ্চলভিত্তিক দক্ষ প্রশিক্ষক প্যানেল সৃষ্টি করতে হবে। প্রশিক্ষণের মূল্যায়ন তাদের পরবর্তী পদোন্নতি এবং পদায়নের ক্ষেত্রে যাতে ভূমিকা রাখে সে ব্যবস্থা নীতিমালায় সংযুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বাস্তবসম্মত ক্যারিয়ার প্লানিং প্রণয়ন করতে হবে- যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে উৎসাহিত হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা হবে কারিগরি ও বিজ্ঞানভিত্তিক এবং উচ্চ শিক্ষা হবে গবেষণাভিত্তিক।

স্বাস্থ্য খাত: এ খাতে দুর্নীতির উৎসের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি প্রভৃতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বিদ্যমান। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণার্থী বাছাই প্রভৃতিতে কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করা। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের  কর্মচারীরা একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার সুবাদে স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রে পরিণত হয়। উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট চালানোর জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়েই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়, যা দীর্ঘকাল অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত খরচ দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে সরবরাহ বা মেরামত করা হয় না, বরং সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। যথাযথ নজরদারি না থাকায় হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের দেওয়া হয় না।

সরকারি ক্রয়খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বার্ষিক প্রতিবেদনের সুপারিশ হলো- দেশে বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস্ যুগোপযোগী করা সমীচীন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ বিদ্যমান আইনের অধীনেই বেশকিছু ক্রয় দুর্নীতি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুদকে মামলাও দায়ের করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে দক্ষ বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে দ্রুত সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকড় চিহ্নিত করে তা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। সেক্ষেত্রে দেশের ক্রয় কাজে সর্বাধিক সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও এই প্যানেলে যুক্ত করতে হবে। ক্রয় প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিজ্ঞাপন বা প্রচারসহ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিদ্যমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, বিধি ও ইজিপি সিস্টেম কার্যকর, স্বয়ংক্রিয় জবাবদিহিমূলক হিসেবে প্রণয়ন করা সমীচীন বলেও দুদক মনে করে।

আয়কর বিষয়ে দুদক বলছে ট্যাক্স দেওয়ার (আয়কর রিটার্ন) জটিলতার কারণেই দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ে। কারণ ট্যাক্সের ফর্মটাই একটা জটিল। প্রয়োজন নেই এমন তথ্য চাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দুদক একটা সহজ রিটার্ন ফর্ম সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। সেটি বিবেচনা করা যেতে পারে। দুদক চায় অনলাইনে ট্যাক্স দেওয়ার ব্যবস্থা আরও গতিশীল হোক।

দুদক ২০১৬ সাল থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আইনের বিধি-বিধান অনুসরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অথবা এদের অধীন দপ্তর বা সংস্থাগুলোর কার্যপ্রক্রিয়া পদ্ধতিগত সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সুপারিশ দিয়ে আসছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলো তেমন কার্যক্রম পরিচালনা করেনি বলেও দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে।

দুদক মনে করে সরকারি পরিষেবা দিতে বিদ্যমান দুর্নীতি, হয়রানি নিরসনে পদ্ধতিগত সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। দুদক বিশ্বাস করে, এসব সুপারিশ বিচার-বিশ্লেষণ করে বাস্তবায়ন করা হলে এসব প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত অনিয়ম-দুর্নীতি-দীর্ঘসূত্রতাসহ জনহয়রানি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। যেহেতু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দুদক সংক্রান্ত বিষয়াবলি ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই দুদকের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া যেতে পারে।

পুলিশ বিভাগ নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- দেশের পুলিশি সেবার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে থানা। এসব থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। থানা থেকে সাধারণ জনগণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সেবা পাচ্ছেন না-এমন অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ দপ্তরেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-এর বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রেক্ষাপটে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ) ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার অথবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়নের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে বর্তমানের কোটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে কমিশন থেকে আগেও সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পার হলেও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা হয়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদন বলছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭(১) অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের পদ-প্রতিষ্ঠার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ৭৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়পালকে মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ দায়িত্ব প্রদানের সাংবিধানিক ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও সাংবিধানিক এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশের সুশাসন তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ প্রেক্ষাপটে দেশে ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সরকার পদোন্নতির বিষয়ে দুদকের সুপারিশের বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, সরকারি কর্মচারীদের নবম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেডের সব পদে পদোন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট সিলেবাসের আওতায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাস্তবসম্মত বলে প্রতীয়মান হয়। দুদক এরইমধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছে।

নদী দখল: প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক এবং কতিপয় সর্বগ্রাসী নদী দখলদারের কারণেই দেশের নদীগুলো আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ‘ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন কমিশন’ এর রিপোর্ট অনুসারে দেশের ৬৪টি জেলার ১৩৯টি নদী ব্যাপকভাবে দখল করা হয়েছে। কেবল ঢাকার বাইরে ৪৯ হাজার ১৬২ জন নদী দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের সুপারিশ হলো প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকরা স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে যেসব নদী দখল হয়েছে-তা উচ্ছেদের মাধ্যমে নদীগুলোকে দখলমুক্ত করবেন এবং দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া।

স্থায়ী সিভিল সার্ভিস সংস্কার কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে দুদক বলছে, সিভিল সার্ভিসের মানোন্নয়ন এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সিভিল সার্ভিস সংস্কার কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ওই কমিশন নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বাড়ানো, পেশাগত পরিকল্পনা, বিশেষায়িত জ্ঞান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিসহ সিভিল সার্ভিসের মৌলিক বিষয়ে সরকারকে নীতিগত পরামর্শ দেবে। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনি কাঠামো সংশোধন করতে সরকারকে পরামর্শ দেবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির লাগাম টেনে  ধরতে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনের সুপারিশ হলো- প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে বদলি ও পদায়নের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বহুল আলোচিত বদলি-পদায়ন সম্পৃক্ত দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ন্যূনতম দুইবছর উপজেলা পর্যায়ে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা সমীচীন। এই পদায়নের মাধ্যমে নবীন কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ের নাগরিকদের সরকারি পরিষেবা পেতে- দুর্নীতির কারণে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা অনুধাবন করতে পারবে এবং তা প্রতিরোধ করতে পারবে। এর মাধ্যমে নবীন কর্মকর্তাদের মনে দেশের সাধারণ নাগরিকের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ বিকশিত হবে।

সার্বিক বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি বিদ্যমান। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছ ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ মাঠে থাকেন, গ্রামে থাকেন। গ্রামের সঙ্গে উপজেলা, থানার সম্পর্ক রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ২২টিরও বেশি বিভাগ কাজ করে থাকে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে গেলে সম্মিলিত প্রয়াস লাগে, কো-অর্ডিনেশন লাগে।

আরএম/জেডএস