কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ হোটেল বয় আবার কেউ বিয়ে বা পার্টির ডেকোরেশনের কাজে জড়িত। কিন্তু রাতের বেলা এরাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। তারা ছিনতাই করা পিকআপ বা ট্রাকে করে নির্জন স্থান বা ফ্লাইওভারের ফাঁকা এলাকায় অবস্থান নিয়ে পথচারী, মোটরসাইকেল ও মালবাহী যানবাহন থামিয়ে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করেন।

চক্রটির দলনেতা শাওন আহম্মেদ জয় একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও সে তার ছিনতাই মিশন থামায়নি। বরং জেলে গিয়েও ডাকাত-ছিনতাই চক্র গুছিয়েছে। বেরিয়ে আবারও জড়িয়েছে ছিনতাই অপকর্মে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলাও।

গত ২ ফেব্রুয়ারি এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চক্রটি দুজনকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে ২২ হাজার ডিমসহ একটি পিকআপ, নগদ ৫২ হাজার টাকা, চারটি মোবাইলফোন নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। পথচারীদের মাধ্যমে মো. রিপন ও চালক নূর মোহাম্মদ কোনোরকমে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে যান। পরে তারা মামলা করেন।

ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালেও তার আগে থেকেই আরেক মামলায় ছায়া তদন্ত করে এ চক্রের সংশ্লিষ্টতা পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্রসহ পেশাদার ছিনতাই-ডাকাত চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- শাওন আহম্মেদ জয়, জাহিদুল ইসলাম, ইয়ামিন, হৃদয় ও বাবুল। এসময় তাদের থেকে ছিনতাই করা এবং ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত দুটি পিকআপ, একটি চাপাতি, তিনটি ছুরি ও ১১টি মোবাইল ফোন জব্দ করে।

উদ্ধার করা দেশীয় অস্ত্র, টাকা ও মোবাইল ফোন

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৪টায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকা থেকে দুই ব্যক্তিকে ৬/৭ জন ডাকাত একটি পিকআপ গাড়ি দিয়ে গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ওই ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় গোয়েন্দা ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত জানা যায় এই চক্রটিই ওই ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও জড়িত।

ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা একটি সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্য। তারা রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে পিকআপ বা ছোট মাহেন্দ্র ট্রাক ছিনতাই করে। ছিনতাইকৃত যানবাহনের মাধ্যমে রাত ১২টার পর তারা হয়ে উঠেন ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। রাজধানীর মহাখালী, সাভার, শাহ আলী, মিরপুরের গুদারা ঘাট, শেরেবাংলা নগরসহ আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ ও ভুলতা এলাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই-ডাকাতি চালায়।

চকবাজার থানায় করা মামলার তদন্তে জানা যায়, ওই ডাকাতির ঘটনায় সাতজন অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে উল্লেখিত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকী অভিযুক্তসহ এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, এই চক্রটি গত ২ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী বেলাবো থেকে কামরাঙ্গীরচ

রগামী একটি ডিমবাহী পিকআপ ২২ হাজার ডিমসহ ছিনতাই করে। ছিনতাইকালে তারা দুজনকে হামলা করে রাস্তায় ফেলে ডিমসহ পিকআপটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান হাফিজ আক্তার

গ্রেপ্তারদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় চক্রটির দলনেতো শাওন আহমেদ জয় জেলে গেছে। জেলে বসেই তার ডাকাতি-ছিনতাই দলের সদস্য সংগ্রহ করে। জেল থেকে বেরিয়ে ফের ছিনতাই ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করে। সর্বশেষ সে গত রাতে ফের গ্রেপ্তার হয়।

ডিএমপি গোয়েন্দা প্রধান বলেন, আমরা দেখেছি এধরনের অনেক ঘটনা ঘটলেও পুলিশি অভিযোগ হয় খুবই কম। আবার কোনো চক্র গ্রেপ্তার হবার পর বেশ অভিযোগ আসে।

মহানগর এলাকাসহ এর আশপাশে এধরনের ঘটনার ঘটলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত সিসিটিভি মনিটরিং করছি। তবে অভিযোগ না আসলে তদন্ত কাজও ব্যহত হয়।

জেইউ/ওএফ