চতুর্থধাপের পৌর ভোট: ইভিএমের বিশেষ পরিপত্র জারি
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি (রোববার) চতুর্থধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ৩১টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ধাপে ৩১ পৌরসভার ভোটগ্রহণ করতে ইভিএম নিয়ে বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে ইসি।
এ বিষয়ে ইসি’র যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) কর্মকর্তারা সরেজমিন উপস্থিত থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব কারিগরি সহায়তা দেবেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইভিএম কাস্টমাইজেশনসহ নির্বাচন উপযোগী করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চতুর্থ ধাপে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অথবা জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অথবা বিশেষ অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। কয়েকটি পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। এর মধ্যে ৩১ পৌরসভায় ভোট হবে ইভিএমে, বাকিগুলোতে ব্যালটে।
গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি। পরে এ ধাপে আরও দুটি পৌরসভা যুক্ত করায় মোট ৫৮ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে এদিন।
বিজ্ঞাপন
যে ৫৮ পৌরসভায় ভোট
ঠাকুরগাঁও সদর ও রানীশংকৈল, লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও কালাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী, তানোর ও তাহেরপুর, নাটোর সদর ও বড়াইগ্রাম, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা, যশোরের চৌগাছা ও বাঘারপাড়া, বাগেরহাট সদর, সাতক্ষীরা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরিশালের মুলাদী ও বানারীপাড়া, টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও কালিহাতী, জামালপুরের মেলান্দহ, শেরপুর সদর ও শ্রীবরদী, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ফুলপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম, নরসিংদী সদর ও মাধবদী, রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ, ফরিদপুরের নগরকান্দা, মাদারীপুরের কালকিনি, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, সিলেটের কানাইঘাট, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার হোমনা ও দাউদকান্দি, চাঁদপুরের কচুয়া ও ফরিদগঞ্জ, ফেনীর পরশুরাম, নোয়াখালীর চাটখিল, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রাঙামাটি সদর, বান্দরবান সদর ও নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি।
যে ৩১ পৌরসভায় ইভিএমে ভোট
ঠাকুরগাঁও, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, লালমনিরহাট, নরসিংদীর মাধবদী, রাজবাড়ী, বরিশালের মুলাদী, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, বাগেরহাট, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কুমিল্লার হোমনা এবং দাউদকান্দি, চট্টগ্রামের পটিয়া, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, ফেনীর পরশুরাম, চাঁদপুরের কচুয়া, মাদারীপুরের কালকিনি, নেত্রকোনা, যশোরের চৌগাছা, রাঙামাটি, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, ময়মনসিংহের ফুলপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, নোয়াখালীর চাটখিল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি।
দেশে পৌরসভা রয়েছে ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোট হয়েছে। আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং পঞ্চম ধাপে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে অংশ নেয়।
ইভিএম ব্যবহারে ইসি’র বিশেষ পরিপত্রে যা বলা হয়েছে
ইভিএম ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার: ইভিএম ব্যবহার যেহেতু একটি কারিগরি বিষয় এবং নতুন ধরনের ব্যবহারের কার্যকারিতা রয়েছে, এজন্য সব প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট এবং ভোটারদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের সুবিধার্থে ইভিএম ব্যবহার পদ্ধতি বিষয়ক একটি নির্দেশিকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ: নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য দুই দিনব্যাপী এবং পোলিং অফিসারদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে এক দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মক ভোটিং: নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে এ পদ্ধতিতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে সব সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার উপস্থিত থেকে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। মক ভোটিং শেষে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার গণভোটে ব্যবহৃত ইভিএমগুলো সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে বুঝিয়ে দেবেন। অফিসাররা ভোটগ্রহণের দিন ভোটগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
নিরাপত্তা সহকারে ইভিএম এর পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা যাচাই করা: ইভিএমগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস হওয়ায় মেশিনগুলো সারিবদ্ধভাবে রেখে যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে পরিবহন করতে হবে। ভোটগ্রহণের আগের দিন অন্যান্য নির্বাচনী মালামালসহ বিভিন্ন প্রিজাইডিং অফিসারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ অবশ্যই সঠিকতা যাচাই করবেন। কোনোরকম ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। রিটার্নিং অফিসার কন্ট্রোলরুমকে অভিহিত করে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন অথবা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কারিগরি দলের গঠন: প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন করে কারিগরি সদস্য সহযোগিতা করবেন। এর জন্য রিটার্নিং অফিসার তাদেরকে প্রয়োজনে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবেন। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র ভোটকক্ষ প্রস্তুত করবেন।
মোবাইল কারিগরি টিম: নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল কারিগরি টিম সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ইভিএম এর কারিগরী সমস্যা আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করবেন।
ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ডের এবং পিন পাসওয়ার্ড গোপনীয়তা রক্ষা: ইভিএম এর জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কার্ড এবং মেশিন চালু করার পিন পাসওয়ার্ড প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করা হবে। সরকার যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করে এবং এসবের কার্ড এবং পাসওয়ার্ড যথাযথ গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।
অতিরিক্ত অডিট ও পোলিং কার্ডের ব্যবহার: সুষ্ঠুভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রে ব্যবহৃত অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ডের একটি সামগ্রিক বেকআপ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত রাখবেন।
ইভিএম যাচাই করা: ভোটগ্রহণের আগের দিন অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের বিপরীতে ব্যালট ইউনিটে সঠিকভাবে প্রতীক সন্নিবেশিত আছে কি না তা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে প্রিজাইডিং অফিসার যাচাই করবেন।
ডেমো ভোটগ্রহণ: ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য নেওয়া ইভিএমগুলো ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টকে দেখাতে হবে। ডেমো ভোটগ্রহণের সময় ইভিএমগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে হবে।
এসআর/জেডএস