স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো আজ/ ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরের সারা রিসোর্টে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকের প্রতিষ্ঠান ‘ফোরথট পিআর’-এর তিন কর্মকর্তা বিষাক্ত মদপানে মারা গেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পরে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা মদপানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় থানায় পুলিশ মামলা দায়ের করেছে।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতির ওপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে কমিটিকে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে সারা রিসোর্ট ছাড়াও বগুড়ায় মদপানে মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।

সারা রিসোর্টের ঘটনার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা থেকে ৪৩ কর্মকর্তার একটি দল শ্রীপুর থানার সারা রিসোর্টে বেড়াতে যান। তারা সবাই এশিয়াটিক মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন ফোরথট পিআরে কাজ করেন। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা ফেরার পথে ওই দলের অন্তত ১৬ জন শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করলে তারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ওইদিন রাত ১০টায় কায়ছার আহমেদ নামে এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান। পরের দিন ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টায় শিহাব জহির এবং ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় এ কে এম শরীফ জামান ভূঁইয়া মারা যান। মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়, তারা সারা রিসোর্টে অবস্থানকালে বিষাক্ত মদপান করেছেন। ওই ঘটনায় অসুস্থ অন্য ব্যক্তিরা সুস্থ হওয়ার পর মদপানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রীপুর থানায় ৩০৪ (ক) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনায় মদ সরবরাহ করার জন্য মো. জাহিদ মৃধাকে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদ পুলিশের কাছে প্রথম পর্যায়ে ছয় বোতল ও পরবর্তী সময়ে আরও মদ সরবরাহের বিষয়টি স্বীকার করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানানো হয়।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের ১৯ হাজার ২৭ জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৮৬৩ জন, মারা গেছেন ৮৫ জন এবং চিকিৎসাধীন আছেন ৭৯ জন।

বৈঠকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজ পরিচালনার জন্য গঠিত তদন্ত সংস্থা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

এতে বলা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৮টি মামলায় ৩২৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি মামলায় ৯৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে ৭০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ২৫ জনের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ এবং এক জনকে ২০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। বর্তমানে ৩৬টি মামলায় ২২৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান আছে। বিভিন্ন কোর্ট, থানা ও জনগণের কাছ থেকে সারাদেশে তিন হাজার ৮৩৯ জনের বিরুদ্ধে ৬৯৪টি মামলা/অভিযোগ অনুসন্ধান/তদন্তের অপেক্ষায় আছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী ঘটনার অভিযোগ তদন্ত করে বিচার শেষে সকল মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা তদন্ত সংস্থার দক্ষতার পরিচায়ক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মাদকাসক্ত আসামিরা বিশেষ অপরাধী বিধায় মাদক মামলায় আটক হওয়া আসামিরা যেন সহজে জামিনে বের হয়ে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কমিটি মতামত দেয়। মাদক মামলাসহ সকল মামলায় জড়িত আসামি যে দলেরই হোক না কেন- তাকে কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

এছাড়া বৈঠকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করে বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য প্রচার/অপপ্রচার চালায় সে সকল রাষ্ট্রদ্রোহীদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরবর্তী বৈঠকে বিস্তারিতভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।

এমপিদের অগ্রাধিকারভিত্তিকে অস্ত্রের লাইসেন্স দিতেও সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে আগ্নেয়াস্ত্র বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদেরকে অগ্রাধিকার দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। পাবনা জেলা কারাগারকে শহরের বাইরে স্থানান্তর করা যায় কি না- তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. আফছারুল আমীন, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং বেগম রুমানা আলী অংশগ্রহণ করেন।

এইউএ/এফআর