আটক হওয়া কিশোর গ্যাং সদস্যরা

সম্প্রতি রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা ছোট ভাই-বড় ভাই, সালাম দেওয়া-না দেওয়া, সিগারেট খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। এসব ছোট ছোট কারণে খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ে জড়িতদের অধিকাংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের অপতৎপরতা রোধে কাজ করছে ডিএমপি।

ঢাকা শহরে কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িতদের প্রোফাইলিং (তালিকা) করা হচ্ছে জানিয়ে মাহবুব আলম বলেন, এখানে জড়িত তাদের অধিকাংশই নিম আয়ের পরিবারের। করোনার সংকটকালে শহরে এমন গ্যাংয়ের তৎপরতা কমে গিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর আবারও তাদের তৎপরতা বেড়েছে।

রাজধানীর কদমতলী ও মুগদা এলাকায় চাঞ্চল্যকর পৃথক দুটি হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পৃথকস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।

এ সংক্রান্তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুগদা থানা এলাকায় সালাম দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হাসান (১৭) নামে এক কিশোর খুন হয়। ওই ঘটনায় গত রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম। গ্রেপ্তাররা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।

কিশোর গ্যাং কালচারের নেপথ্যে রাজনৈতিক ছত্রছায়া বা প্রভাব অনুঘটক কি-না জানতে চাইলে মাহবুব আলম বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। আমরা ডিএমপির সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, যে বা যারাই মাদকের সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর নেপথ্যে থেকে প্রভাবশালী কেউ কিংবা রাজনৈতিক ছত্রছায়া দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

অন্যদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত আটটার মধ্যে কদমতলী থানাধীন ১৩৪০ পূর্ব জুরাইন কলেজ রোডে, নবারুন গলিতে অজ্ঞাতরা জাকির হোসেনের বুকে-পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পায়ের রগ কেটে দেয়। একইসঙ্গে ঘটনায় মজিবর রহমান ওরফে মোহনকে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

বাদীর এজাহার, ভিকটিমের দেওয়া তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত সাতজনকে শনাক্ত করার পর গ্রেপ্তার করে ওয়ারী গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- শুক্কুর, নুরুল ইসলাম স্বপন, রতন ওরফে সোলাইমান ওরফে রেম্বো, শফিকুর রহমান ওরফে দিপু, ফাহিম হাসান তানভীর ওরফে লাদেন, তরিকুল ইসলাম তারেক ও মাসুদ পারভেজ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য তারা জাকির হোসেনকে হত্যা করে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে শুক্কুরের বিরুদ্ধে ৪টি, নুরুল ইসলাম স্বপনের বিরুদ্ধে ৩টি, পারভেজ ও রতনের বিরুদ্ধে ২টি, দিপু, ফাহিম হাসানের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা রয়েছে।

জেইউ/এমএইচএস