মেয়েকে নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন মাহমুদা আক্তার/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

মাহমুদা আক্তার, কোলে দেড় মাসের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া। বিএম ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডে নিহত কুমিরা ফায়ার স্টেশনের নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট মো. মনিরুজ্জামানের স্ত্রী।

সোমবার (২০ জুন) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এসেছিলেন বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষের দেওয়া ক্ষতিপূরণের চেক নেওয়ার জন্য। সার্কিট হাউসের ভেতরে একটি চেয়ারে বসে মেয়েকে নিয়ে কান্না করছিলেন। এ সময় সঙ্গে আসা আত্মীয়রা তাকে সান্ত্বনা দেন।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে মাহমুদা আক্তার বলেন, মেয়েটির বয়স মাত্র দেড় মাস। এখনও ভালো করে পৃথিবীর আলো বাতাস পায়নি। এর মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছে। আজ বিএম কনটেইনার ডিপোর পক্ষ থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাকি জীবন পাড়ি দেব সেই চিন্তায় আছি।

তিনি বলেন, শুনছি বিএম ডিপোয় হতাহতদের চাকরি দেওয়া হবে। আমি অনার্স পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি। আমি একটি সরকারি চাকরী চাই। তাহলে আমার মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তা কিছুটা হলেও কমত। আমি একটা চাকরি করতে পারলে মেয়েটি বড় হলে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আর চিন্তা করত না।

একটু দূরেই ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন নিহত ফায়ার ফাইটার আলাউদ্দিনের স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা। অনুষ্ঠানস্থলের মানুষ দেখেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সঙ্গে তার ৫ বছরের এক শিশু সন্তান। তাকে নিয়ে চিন্তায় দিন কাটছে তাসলিমার।

তাসলিমার সঙ্গে আসা তার ভাই মুকুল তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন৷ মুকুল বলেন, আপুকে কোনভাবেই সান্ত্বনা দিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ভাগ্নেকে সব কিছুই দিতে পারব কিন্তু বাবাকে এনে দিত পারব না।

সোমবার (২০ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামর সার্কিট হাউসে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত ৬৯ জনের পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ করেছে বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড। চেক তুলে দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিএম ডিপোতে মারা যাওয়াদের মধ্যে থেকে আজ ২৬ জনের পরিবারকে চেক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নিখোঁজ ৩ জনসহ ১৩ পরিবারকে ১৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। আর নিহত অন্য ১৩ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। আহত ৪৩ জনের পরিবারকে আহতের মাত্রা অনুযায়ী ১০ থেকে ২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারে যদি কেউ কর্মক্ষম থাকে তাহলে তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ। যাদের কর্মক্ষম কেউ নেই তাদের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করবে তারা। এছাড়া যারা আহত হয়ে কর্ম ক্ষমতা হরিয়েছেন তাদের পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তির চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

অনুষ্ঠানে স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, বিএম ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডে নিহতের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মত্যাগকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য অফিসের সামনে দুটি  স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।

কেএম/এসকেডি