ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে সম্পন্ন করা হয়েছে। সেতু নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২২ হাজার ৫৯৩ পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ৮০ হাজারের বেশি নাগরিকের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়েছে সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে। 

শুক্রবার (২৪ জুন) সংবাদ মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনসাধারণের প্রয়োজন, জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কিংবা রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নেওয়ার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল কার্যক্রম ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায়, এর মাঠ পর্যায়ের দপ্তর - কালেক্টরেট তথা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। প্রত্যাশী সংস্থার আবেদন মতে ভূমি বরাদ্দ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে, প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযোজ্য ভূমি অধিগ্রহণ আইন, অধ্যাদেশ এবং বিধি অনুসরণে স্বল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করে প্রত্যাশী সংস্থার কাছে দেওয়া হয়।

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেন অধিগ্রহণ পরবর্তী পুনর্বাসনসহ নানামুখী সহায়তা লাভ করতে পারেন, সে জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনার সময় ভূমি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে লিখিত শর্ত নিয়েই প্রত্যাশী সংস্থার (পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ) নিকট জমি হস্তান্তর করে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অনুশাসন আছে।

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যক্তিদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকৃত জমির অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ, অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা, ঘর-বাড়ি ও গাছগাছালির ক্ষতিপূরণ এবং ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা দেওয়া ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির মৌজা মূল্যের দেড়গুণ অর্থ পরিশোধসহ উপযুক্ত সব নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় এ প্রকল্পের অবস্থান। সেতুর উত্তর প্রান্তে মাওয়া, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ এবং দক্ষিণ প্রান্তে জাজিরা, শরীয়তপুর ও শিবচর, মাদারীপুর।

মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, এবং শরীয়তপুর জেলায় মোট ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬৯৩ হেক্টর এবং বরাদ্দ প্রায় ২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। জমি অধিগ্রহণ, বন্দোবস্ত ও হুকুমদখলের জন্য ৩ হাজার ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, নির্মাণ বয়ের প্রায় ১০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ, বন্দোবস্ত ও হুকুমদখল এর জন্য ব্যয় হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা, পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনা, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০০৬ সালে সম্পন্ন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয় ২০০৯ সালে। এই প্রকল্পের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প (ভূমি অধিগ্রহণ) আইন, ২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়।

পদ্মা নদীর দুই প্রান্তে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত (মসজিদ, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি) ৭টি পুনর্বাসন সাইটে মোট ৩ হাজার ১৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত। এছাড়াও ১০০টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা জমি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন, তাদেরকে পুনর্বাসন সাইটের অধিগ্রহণের সময়ের দামে জমি কিনতে হয়েছে। আর যারা জমি বাবদ টাকা পাননি, তাদেরকে প্লট দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককেই ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সহায়তা এবং ক্ষেত্র বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জীবনধারণের জন্য দেওয়া হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স, টেইলারিং, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগী পালন, গরু-ছাগল পালন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং, ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রশিক্ষণসহ নানা ধরণের প্রশিক্ষণ। জমির মূল্য ছাড়াও বিভিন্ন সহায়তা বাবদ অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা হিসাবে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থার মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য এসব সহায়তা নিশ্চিত করে।

এমএইচএন/আইএসএইচ