শুধু পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে খুব বেশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে না বলে মনে করছেন পাম্প মালিকরা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সারাদেশে সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতি। জ্বালানি সাশ্রয়ে গণপরিবহন চালু রেখে ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। 

তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা পেলে পেট্রোল পাম্প মালিকরা পরবর্তী প্রস্তুতি নেবেন। তবে শুধু পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে খুব বেশি তেল সাশ্রয় হবে না বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স মালিক সমিতির সভাপতি ও রমনা পেট্রোল পাম্পের এমডি মোহাম্মদ নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা আসলে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেব। সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে পেট্রোল পাম্প বন্ধ করলে খুব বেশি পরিমাণে জ্বালানি সাশ্রয় হবে না।

আরও পড়ুন : লোডশেডিংয়ের সময় প্রকাশ করল ডিপিডিসি ও ডেসকো 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বললেও গতকাল মন্ত্রী পেট্রোল পাম্প বন্ধের বিষয়টি অনেকটা এড়িয়ে গেছেন। সম্ভবত তারা বুঝতে পেরেছেন, পাম্প বন্ধ রেখে তেমন সাশ্রয় হবে না। সারাদেশে প্রতিদিন ২০ হাজার টন জ্বালানির চাহিদা। পাম্পগুলো একদিন বন্ধ রাখলে হয়ত ১০০০ থেকে ১২০০ টন সাশ্রয় হবে, তবে সেটি হবে শিল্প খাতে; যানবাহন খাতে নয়। কারণ আমাদের ডিজেল বা তেলের ৮০ শতাংশ পরিবহন খাতে ব্যবহার হয়। তাই পরিবহনের লাগাম টানতে হবে। অফিস আদালত ও ব্যক্তিগত পরিবহনের লাগাম টেনে ধরতে পারলে সমাধান আসবে।

তেল রিজার্ভ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের তেল রিজার্ভের সুযোগ নেই। কারণ একটি পাম্পে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিনদিনের তেল মজুত রাখা যায়। শুধু পাম্প বন্ধ নয় একই সঙ্গে অনুমোদিত সব ধরনের খোলা তেল বিক্রিও বন্ধ রাখতে হবে। তাই সরকারের নির্দেশনা আসতে হবে যেকোনো ধরনের জ্বালানি তেলের প্রতিষ্ঠান একদিন বন্ধ থাকবে; তাহলে সিদ্ধান্তটি ফলপ্রসূ হবে। 

আরও পড়ুন : ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস করার প্রস্তাব, হয়নি সিদ্ধান্ত

তিনি আরও বলেন, এরশাদ সরকারের সময় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিল যদিও তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। আমরাও চাই যাতে দেশের ক্ষতি না হয়। আগে অনেকবার আমরা দেখেছি, তেলেরও ওপর নিয়ন্ত্রণ এসেছে, রেশনিং হয়েছে। রেশনিং করলে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাবে। এক দিনের জন্য বন্ধ, এটা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।

লোকসান কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সরাদেশে পেট্রোল পাম্প বন্ধের উদ্দেশ্য হলো সরকারের (বিপিসি) প্রতিদিন ১০৮ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে; তা কমিয়ে আনা। এ লোকসানের ফলে দেউলিয়া হতে বেশি সময় লাগবে না। এর বাইরে ডলার সংকট। তাতেও একটা সুরক্ষা দেওয়া। 

যানবাহনের বাড়তি চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিন হয়ত একটু সমস্যা হবে। জনসাধারণ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আমার মনে হয় না। কারণ যে দিন পাম্প বন্ধ থাকবে তার আগের দিন জ্বালানি নিয়ে রাখতে পারবেন গাড়ির মালিকরা।  

রাজধানীর ৪৭ টয়েনবি রোডের পূর্ণিমা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিস স্টেশনের ম্যানেজার আবুল কাশেম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের অবশ্যই মানতে হবে। আমরাও চাই তেল সাশ্রয় হোক। দেশ ভালোভাবে চলুক। আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী কাজ করব। আমাদের এখান থেকে ওয়াসা, ঢাকা জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসহ অনেকেই জ্বালানি নেয়। এগুলো জরুরি সেবা। তবে সিদ্ধান্ত যা আসবে তাই আমরা মান্য করব।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত করা হয়েছে।

আইবি/এসকেডি