৩০ শতাংশ কোটাসহ সাত দাবিতে শাহবাগ অবরুদ্ধ করে রাখা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতাকর্মীরা অবশেষে পিছু হটেছে।  মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় প্রথমে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। পরে দুপুর ১২টা থেকে শাহবাগ অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার ও লাঠিচার্জ শুরু করলে তারা পিছু হটে।

অবরোধের ফলে কাঁটাবন, শাহবাগ ও বাংলা মোটর অভিমুখী সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এরপর শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক হালদার মামুন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি করছিলাম। এরমধ্যেই বিনা উস্কানিতে পুলিশ আমাদের উপর হামলা চালায়, জলকামান ব্যবহার করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। একজনকে গাড়িতে তুলে নিয়েছে। আমার ওপর হামলা করেছে পুলিশ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আগামীতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।

কর্মসূচিতে সংগঠনটির বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন বলে জানানো হয়। দুপুর থেকে তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কোটা কোটা কোটা চাই, ৩০ শতাংশ কোটা চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা জেগেছে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এর আগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে। আমরা আপাতত তিন দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। যদি দাবি মানা না হয় টানা অবরোধে চলবে। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এসেছি। কেউ আমাদের বাধা দিতে পারবে না।

যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ৩০ শতাংশ কোটাসহ সাত দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছেড়ে যাব না।

ঢাকা বিভাগ কমান্ডের সদস্য সচিব গোলাম রব্বানী শান্ত বলেছিলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আজকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। যেভাবে হোক, আমরা আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়ব। যারা কোটা বাতিলের আন্দোলন করেছো তোমরা কোথায়, আসো তোমাদের সাথে খেলব, খেলা হবে!

তাদের দাবিগুলো হলো- সব চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করতে হবে; সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মুক্তিযােদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন পাস করা মর্যাদা নির্ধারণ করা; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে শহীদ মুক্তিযােদ্ধা ও অসুস্থ মুক্তিযােদ্ধা পরিবারের একজন প্রতিনিধিকে ভোটার ও ১৯৭২ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ভুয়া মুক্ত তালিকা প্রণয়ন করতে হবে; মুজিব কোটের পবিত্রতা রক্ষায় সিনেমা, সিরিয়াল নাটকে মন্দ চরিত্র মুজিব কোট পরা নিষিদ্ধ করাসহ মন্দ লােকদের মুজিব কোট পরা যাবে না, এই মর্মে আইন পাস করতে হবে; মুক্তিযােদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা; মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা নির্যাতন ও জমি দখলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে; দুর্নীতি, মাদক, ধর্ষণের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখাসহ কঠোর আইন প্রণয়ন করতে এবং হাসপাতাল, সরকারি অফিস, বিমান বন্দরসহ সবক্ষেত্রে বীর মুক্তিযােদ্ধাদের ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে।

ওএফ