চলতি বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বরে অর্থাৎ আগামী মাসে অবসরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। ইতোমধ্যে তার উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত আইজিপির নাম শোনা গেলেও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, ড. বেনজীর আহমেদই  আইজিপি হিসেবে দায়িত্বে থাকছেন। তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হতে পারে।

আরও পড়ুন >> ড. বেনজীর আহমেদ : প্রমিথিউস অব পুলিশিং

আইজিপি হওয়ার আগে ডিএমপি কমিশনার ও র‍্যাব মহাপরিচালক হিসেবে সফলতা দেখিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। তার কাছ থেকেই সর্বোচ্চ সেবা পেতে চায় রাষ্ট্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি নির্বাচনেই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হয় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশের ভূমিকা। নির্বাচনকালীন সেই পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকছেন, সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক সূত্র জানায়, শুধু পুলিশপ্রধান নন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধানদের নিয়োগ ও চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়। এবারও সেখান থেকেই হবে। তবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য অভিজ্ঞ হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৪-এর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে আইজিপির মেয়াদ দেড় বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

আরও পড়ুন >> সেরা করদাতা হলেন আইজিপি

এদিকে, মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে ড. বেনজীর আহমেদের কোনো আপত্তি নেই বলেও নিশ্চিত হয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

২০২০ সালের এপ্রিলে পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. বেনজীর আহমেদ। আইজিপি হওয়ার আগে তিনি র‍্যাব মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল দায়িত্ব পাওয়ার পরই ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনেন। পুলিশের পদোন্নতি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণের মতো সিদ্ধান্ত নেন। হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং চালু করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য ট্যাকটিক্যাল বেল্ট চালু করেন। নারীদের সাইবার বুলিংয়ের মতো নির্যাতন বন্ধে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে সেবার প্রবর্তন করেন।

আরও পড়ুন >> ছুটি নেই বেতনেও টান, অতঃপর আত্মহত্যা!

আইজিপি হিসেবে বেনজীর আহমেদের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নতুন ইউনিট চালু, ভাসানচরে নতুন পুলিশ স্টেশন নির্মাণ, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দিতে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়ন এবং ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে তা এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণ।

২০১৮ সালে র‍্যাবের মহাপরিচালক থাকাবস্থায় দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে প্রশংসিত হন ড. বেনজীর আহমেদ। গুলশান হামলা, শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সরকারের ‘গুড বুকে’ নাম লেখান তিনি।

এআর/এমএআর/