পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন নিজে ও তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে প্রায় দুইশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে তার দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন ৬৪ কোটি। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৮ জুলাই দেশে আসেন তারা। আজ বুধবার ভোরে দুজনকে রাজধানীর ধানমন্ডি ও শ্যামলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। কর্মরত থাকাকালে নিজে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে। পরে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থআত্মসাতের অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। 

চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ খেলাপীদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে হাইকোর্ট। পরে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেপ্তার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়।

খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাব জানতে পারে যে, প্রতিষ্ঠানের দুজন ঋণ খেলাপী বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। র‌্যাব এ ঋণ খেলাপীদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার দুজন তাদের বাবা সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নেয়। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তারা গত ২৮ জুলাই কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং আজ পুনরায় গোপনে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছিল।   

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করে।

র‌্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তি/শ্রেণীর আমানতকারী রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় এক হাজার ৮শত কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এই টাকার পুরোটাই পিপলস ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এমএ