সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত বৃদ্ধ মুশতাক আহমেদের বাবা

‘আমার ছেলে নির্দোষ। বিনা বিচারে দিনের পর দিন কারাগারে থেকে তার মৃত্যু হয়েছে। আল্লাহ এদের বিচার করবে।’ অশ্রুঝরা চোখে লাঠিতে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একমাত্র ছেলের চির বিদায়লগ্নে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন লেখক মুশতাকের ৮৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা আবদুর রাজ্জাক। সন্তান হারানোর শোক যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে তার বৃদ্ধ শরীরকে। এসময় শোকে মুহ্যমান বাবা আর স্বজনদের চোখ ছিলো অশ্রুসজল। 

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এশার নামাজের পর রাজধানীর লালমাটিয়ার মিনার মসজিদে মুশতাক আহমেদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মরদেহ নিয়ে আসা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানেই ৯টা ৫০ মিনিটে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এসময় তার সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চিরনিদ্রায় শায়িত মুশতাক আহমেদ

লেখক মুশতাক আহমেদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে অভিযোগ করে তার চাচাতো ভাই ডা. নাফিসউর রহমান বলেন, আমার ভাই অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সুচিকিৎসা পাননি। জামিনযোগ্য হলেও তার ভাগ্যে জামিন মেলেনি। এমন অসুস্থ অবস্থায় পরিবারকে পাশে পাওয়ার বদলে তিনি পেয়েছেন কারাগারের চার দেয়াল। আমাদের পরিবারের সদস্যরা মোটেও ভীত নন। মুশতাকের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রীসহ আমরা বিশ্বাস করি এ অন্যায়ের বিচার একদিন হবে।

মুশতাক আহমেদের সহকর্মী হাসান ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুশতাক অত্যন্ত নম্র স্বভাবের এবং শান্তশিষ্ট মানুষ ছিলেন। তার এমন পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। এমন ঠুনকো অপরাধের অজুহাতে তাকে কারাগারে আটকে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। 

কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে র‌্যাবের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারের পক্ষ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।

লাঠিতে ভর করে হেঁটে আসছেন মুশতাকের বাবা

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দিন হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে মুশতাক আহমেদের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্তে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন।  

এদিকে, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ লেখকের মৃত্যু তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগে আন্দোলনও করেছে। আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

আরএইচ