সামিয়া রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জার্নালে একটি লেখায় প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তির দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদাবনতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

এরপর থেকে গণমাধ্যম, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। সামিয়া রহমানও একাধিক বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্র বলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিগগিরই তিনি আদালতে মামলা করবেন বলেও ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।

তার লেখার প্লেজারিজমের মূল দলিল হিসেবে তদন্ত কমিটি শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্স মার্টিন পরিচয় দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস থেকে চিঠি এসেছে, যার পুরোটাই মিথ্যা। এরকম একটি দলিল সামিয়া রহমানের হাতে আসার পর তিনি এখন বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। সোমবার (১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বেলা ১২টায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে সামিয়া রহমান।

তিনি বলেন, আমি শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ করার পর তারা জানিয়েছেন, অ্যালেক্স মার্টিন বলে ওই জার্নালে কেউ নেই এবং তারা এ ধরনের চিঠি পাঠায়নি বলে শিকাগো জার্নালের এডিটর নিজে স্বীকার করেছেন। তাই পুরো ঘটনাটি মিথ্যা। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তারা এ ভুয়া চিঠি তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, প্লেজারিজমের সঙ্গে জড়িত থাকার দালিলিক প্রমাণ তদন্ত কমিটি দিতে পারেনি। মিথ্যা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। যে চিঠিই মিথ্যা, সেই চিঠির ভিত্তিতে তদন্ত হলে, সেই তদন্ত অবশ্যই ষড়যন্ত্রের।

সামিয়া রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কীভাবে আমার বিরুদ্ধে একচেটিয়া তদন্ত করে জোর করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে তার দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করব সংবাদ সম্মেলনে।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সামিয়া রহমান বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেনি। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা দুই বছর দীর্ঘায়িত করেছে, আমাকে মিডিয়া ট্রায়াল দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি প্লেজারিজম করেছি, এর কোনো দালিলিক প্রমাণ তদন্ত কমিটি দেখাতে পারেনি। তারপরও জোর করে আমাকে জড়িয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলছে, আমি নির্দোষ। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মারজান নিজে বলছে, সে লেখা জমা দিয়েছে। তারপরও আমাকে জড়ানো হয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককেও একই শাস্তি দেওয়া হয়।

সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: আ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ পাচঁ পৃষ্ঠা ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে হুবহু নকল করেছেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস নিবন্ধটিতে ফুকো ছাড়াও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন বৃদ্ধিজীবী অ্যাডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতা হুবহু কপি করা হয়েছে।

একই বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটি কোনো শাস্তি দেওয়ার কথা বলেনি।

এরপর গত বছরের অক্টোবরে সিন্ডিকেট সভায় আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ইনক্রিমেন্ট কাটার মতো ‘লঘু শাস্তির’ সুপারিশ করলেও সিন্ডিকেট তা নাকচ করে তাদের পদাবনতি দিয়েছে।


এনএম/জেডএস