ময়মনসিংহের নান্দাইলে পৌর নির্বাচন

প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে। ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও প্রক্রিয়াগত জ্ঞান না থাকায় বেগ পোহাতে হচ্ছে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের। তারা বলছেন, প্রতিটি ভোট নিতে অন্তত সময় লাগছে ৫ থেকে ৭ মিনিট। এতে করে বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন জমে গেছে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নান্দাইল পৌরসভার চন্ডিপাশা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আচারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসা, নান্দাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আল আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে লম্বা লাইনের চিত্র চোখে পড়েছে।

পৌরসভার আল আজহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সামিয়া সুলতানা কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, একজন নারী ভোটারকে অন্তত ৬ থেকে ৭ বার গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি, তবুও তিনি ভোট দিতে পারছে না। এখন আমি তো আর গিয়ে তার ভোট দিয়ে দিতে পারি না।

চন্ডিপাশা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন ভোটারের ভোট নিতে অন্তত ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগছে। শতকরা ৯৫ শতাংশ লোকই সঠিকভাবে ভোট দিতে পারছে না। আমাদেরকে ভোট নিতে অনেকটাই বেগ পোহাতে হচ্ছে।

ইভিএমে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে কাকচর এলাকার ভোটার জোসনা সূত্রধর (৬০) বলেন, জীবনের প্রথম ইভিএমে ভোট দিলাম। কিছুটা ভয় লাগছিলো। তবে ভোট দিয়ে ভালো লাগছে।

ইভিএম নিয়ে হতাশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক উদ্দিন ভূইয়া। তিনি বলেন, নান্দাইল পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। তবে ইভিএম নিয়ে আমি হতাশ।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এমন হতাশার কথা জানিয়ে রফিক উদ্দিন দাবি করে বলেন, ইভিএমে স্লো (ধীরগতি) ভোট হচ্ছে। প্রতিটি লাইনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে ৩০ থেকে ৩৫ জন সবসময় দাঁড়িয়েই আছে। কিন্তু ভোট কাস্ট (সংগ্রহ) হচ্ছে কম। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি ও নারী লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে। ফলে ভোটারদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এ প্রযুক্তি। তাইতো ভোটগ্রহণ শুরুর সময় থেকেই দীর্ঘ লাইন প্রতিটি কেন্দ্রে। তবে বয়স্ক ভোটাররা ইভিএম না বোঝার কারণে বিলম্ব হচ্ছে ভোটগ্রহণে। তপ্ত গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত অনেকেই। অনেক ভোটার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়ায় লাইনেই বসে পড়েছেন।

জয় নিয়ে কতোটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি বলেন, জয় নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। যেভাবে সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে বিপুল পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো। 

চন্ডিপাশা মডেল প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে মোট ভোট পড়েছে ৯৫৪টি। তাদের মধ্যে ৪৫৯ জন নারী এবং পুরুষ ৪৯৫ জন। মোট ভোট পড়েছে মোট ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রটিতে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত সিরাজুল হক পাঠান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত আমার কেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ভোটগ্রহণে ধীরগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটারদের থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি যে, ভোটগ্রহণে দেরি হচ্ছে। যেহেতু এ উপজেলায় প্রথম ইভিএমে ভোট হচ্ছে, তাই অধিকাংশেরই ভোট দিতে একটু সময় নিচ্ছে। তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট চলছে।

দীর্ঘ দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব শামসুন্নাহার। কিন্তু তার সামনে থেকে যেন ভোটার কমছেই না। ফলে ক্লান্ত হয়ে লাইন ছেড়ে একটি ভবনের সামনে এসে বসে পড়েন তিনি। তার মতো একই অবস্থা রোমেলা, ফুলেছা, রেণু আক্তারসহ অনেকেরই। জানতে চাইলে শামসুন্নাহার বলেন, ‘মেলাক্ষণ ধইরাই তো খাড়াইয়া, আর তো পারতাছি না। লাইন থেইকা তো মানুষ কমেই না, ভোট দিয়াম কিরাম কইরা।’

বয়স্কদের কাছে ইভিএম কিছুটা ঝামেলা মনে হলেও তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে একেবারেই উল্টোচিত্র। অনায়াসেই দিয়ে যাচ্ছেন তাদের ভোট। সায়েম (২০) নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। সিলমারা ভোটের দিন শেষ। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের প্রথম ভোটটি দিলাম। পদ্ধতিটা খুবই সহজ এবং এ ভোটে বেশ স্বচ্ছতাও রয়েছে।

নান্দাইল পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন তিনবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রফিক উদ্দিন ভূইয়া এবং বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাবেক পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ. এফ. এম আজিজুল ইসলাম পিকুল। এছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে ১০জন প্রার্থী ভোটে লড়াই করছেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ১২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। কেন্দ্রগুলোতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। এ পৌরসভায় মোট ২৫ হাজার ৫২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।

টিআই/আরএইচ