ছুটিই হলো কাল, পুড়ে ছাই ৩৫ লাখ টাকা

হঠাৎ কারওয়ান বাজার হাসিনা মার্কেটে লাগা আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটে থাকা হোটেলের কেরোসিন আগুনের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়। আগুনে শুধু দোকানই পোড়েনি, পুড়েছে পুঁজি, পুড়েছে বহু মানুষের স্বপ্নও।

এমনই ক্ষতিগ্রস্ত এক আড়তদার মো. বাচ্চু খান। তিনি দাবি করেছেন, তার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আগুনে পুড়ে গেছে। শুধু বাচ্চু নন, এমন বেশ কয়েকজন আড়তদারের নগদ পুঁজি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কথা হয় আড়তদার মো. বাচ্চু খানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুন যখন লাগে তখন আমি উত্তরা বিমানবন্দর এলাকায় ছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যাই কারওয়ান বাজারে। হাসিনা মার্কেটের কাঠের পাটাতনের উপর দোতলায় আমার গদিঘর, সেখানে আমার ব্যবসার সব টাকা ছিল। শুক্র-শনিবার পড়ায় ওই টাকা আমি ব্যাংকে রাখতে পারিনি। আজ (রোববার) সেই টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা ছিল। কিন্তু রাতের ওই আগুনে আমার ৩৫ লাখ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মনের কষ্ট আর হতাশা নিয়ে আড়তদার বাচ্চু বলেন, ‘ব্যবসাটা কেবল বাড়িয়েছি। নাটোরেও সবজির বড় আড়তঘর খুলেছি। এক রাতের আগুনে আমার তো ভাই সব শেষ। সারা জীবনের পুঁজি আগুনে পুড়ে গেছে। জানি না কি হবে।’

তিনি বলেন, এর আগেও আগুন লেগেছিল মার্কেটে। তখন আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। আমার গদিঘরে সেবার আগুন লাগেনি। ব্যাংকে যোগাযোগ করেছি আমি, টাকা রাখি পূবালী ব্যাংকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলেছেন, জানি না কি হবে।

রোববার সকালে আগুনে পোড়া সেই হাসিনা মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতে মোবাইলের দোকানের আসবাবপত্র, বিকাশ লেনদেনের দোকান, হোটেল, সবজির দোকান, সবজির আড়তঘর পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের পুড়ে যাওয়া দোকান ঘর থেকে বেঁচে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন, পরিষ্কার করছেন।

ব্যস্ত মার্কেটের আশপাশের এলাকা দেখে বোঝার উপায় নেই গত রাতে আগুন লেগে ছাই হয়েছে হাসিনা মার্কেটের ২০ থেকে ২৫টি দোকান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দোকান পরিষ্কারে ব্যস্ত। আর যাদের দোকান আগুনের ছোবল থেকে রক্ষা পেয়েছে, তাদের কেউ কেউ সকাল সকাল সব গুছিয়ে নিয়ে দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করেছেন।

হাসিনা মার্কেটে নয়টি দোকান রয়েছে আব্দুল মান্নানের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সবজি কিনে দোকানগুলো পরিচালনা করেন আড়তদার মান্নান। গত রাতের আগুনে তার সবগুলো দোকানই পুড়ে গেছে। তিনি দাবি করেছেন, সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে তার।

আব্দুল মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বারবার আগুনে পুড়ছি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সব গুছিয়ে যখন আবার ব্যবসা করছি, তখন আবার আগুন লেগে নিঃস্ব হচ্ছি।

ক্ষুব্ধ হয়ে এ আড়তদার বলেন, এবারও আগুনে বলা যায় সব হারালাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত দোকানের কোনো মালিক দেখা করেনি, সান্ত্বনার বাণী তো দূরের কথা।

পাশেই একটি খোলা জায়গায় বিকাশের লেনদেন ব্যবসা করতেন আব্দুর রহমান। তিনি রাতের আগুনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, ‘রাত ৯টার কিছু পরই যখন আগুন লাগে প্রথমে আমি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। তারা খুব দ্রুত মার্কেটে আসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনে আমার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দোকানের চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি আমার ব্যবসার নগদ পুঁজি ৯ লাখ টাকা নিয়ে বের হতে পেরেছিলাম।’

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৮ মিনিটে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচা-পাকা টিনশেড আর কাঠের পাটাতন ব্যবহৃত হাসিনা মার্কেটে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুনে বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে গেছে। আগুনের ফলে আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায়। সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিভাগের উপ পরিচালক (ডিডি) দেবাশিষ বর্ধন।

যোগাযোগ করা হলে দেবাশিষ বর্ধন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে যখন আমরা খবর পাই, তখন দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনিট বাড়ানো হয়। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। একে একে আটটি ইউনিট কাজে লাগানো হয়। 

আগুন নেভাতে এক ঘণ্টা কেন লাগল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটটি কাঠের পাটাতনে দোতলা করা হয়েছে। নিচে দোকান ও উপরে থাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রচুর দাহ্যপদার্থ ছিল। লেপ তোশকের দোকানও ছিল। ভেতরে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। যে কারণে খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

মার্কেটের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটারদের পানির সংকটে পড়তে হয় উল্লেখ করে দেবাশিষ বর্ধন বলেন, আমরা প্রথমেই অগ্নিকাণ্ডস্থলে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ পাইনি। মার্কেট থেকে পানির সরবরাহ সম্ভব ছিল না। আবার সামনে পেছনে কোথাও পানির সরবরাহ করার মতো ব্যবস্থাও মেলেনি। আগুন নেভাতে গিয়ে পরে যুক্ত হওয়া ছয়টি ইউনিটের সঙ্গে একটি করে পানির গাড়িও নিতে হয়। যে কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয়। একই কারণে এর আগেও আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জেইউ/এসএসএইচ