লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান সোমবার
উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন
চট্টগ্রামের পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে সোমবার (১ মার্চ) থেকে। দুইদিন ধরে চলবে এ উচ্ছেদ অভিযান। উচ্ছেদ প্রস্তুতির বিষয়টি রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, সোমবার থেকে উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এদিন সকালে লালদিয়ার চরে বন্দরের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। দুইদিন ধরে এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দেড় হাজার সদস্য উপস্থিত থাকবেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলনরত নেতাদের সঙ্গে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। আদালতের রায়ের কারণে সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ১ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, এরইমধ্যে লালদিয়ার চর থেকে অনেককেই ট্রাকে করে জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র সরে যেতে দেখা গেছে।
লালদিয়ার চরের ৫২ একর ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ৮ মার্চের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের বিস্তারিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে হবে।
এদিকে, উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন লালদিয়ার চরের বাসিন্দারা। লালদিয়ার চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, এখানে ১৪ হাজারের মতো মানুষ রয়েছেন। এখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। যাদের সামর্থ্য আছে তারা চলে যাচ্ছে। কিন্তু বহু মানুষ রয়েছে, যাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাদের রাস্তায় থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমাদের পাশে কেউ নেই।
জরিপ অনুযায়ী লালদিয়ার চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব ‘অবৈধ দখলদারকে’ অবিলম্বে ওই জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে এসে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী লালদিয়ার চরে উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানান। পাশাপাশি বলেন, সেখানে পুনর্বাসনের মতো কেউ নেই। লালদিয়ার চরে জমি ‘দখলে রেখে’ যারা আর্থিক ‘ফায়দা লুটেছে’ তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, লালদিয়ার চরে ২৩শ পরিবারে ১৪ হাজারের মতো বাসিন্দা রয়েছেন। ঘরবাড়ি ছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে এখানে।
কেএম/আরএইচ
বিজ্ঞাপন