বেখেয়ালি বিনোদনের শিকার সূর্যমুখী
হাটহাজারীতে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ভিড়/ ছবি- ঢাকা পোস্ট
একটা সময় ছিল যখন সুন্দর কিছু দেখে মানুষ চোখ মুদে গেঁথে নিতো মনে। এখন মনে গাঁথার আগেই ছবি তুলতে ব্যস্ত হচ্ছেন ফোনে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে চট্টগ্রামে সূর্যমুখী ফুলের বাগান।
হাটহাজারীতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। আর এই সূর্যমুখী মাঠ এখন পর্যটকদের সেলফি স্পট, ছবি তোলার অভয়ারণ্য। অনেকেই চারা মাড়িয়ে বাগানের ভেতরে গিয়ে ছবি তুলে অঙ্কুরেই শেষ করে দিচ্ছেন ফসল। পর্যটকদের এমন বেখেয়ালি বিনোদনে বিপাকে পড়েছে হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
পর্যটকদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. খলিলুর রহমান ভূঁইয়া। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বিভিন্নস্থান থেকে দর্শনার্থীরা এসে বাগানে ভিড় করছেন। মানুষের এমন অবাধ বিচরণে বাগানটি হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে বাগানের ভেতরে প্রবেশ করে ছবি তুলছেন। এতে বাগানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা বাগানের ভেতরে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করি। এরপরও মানুষ বাগানের ভেতর প্রবেশ করছে। বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করলে তো গাছ নষ্ট হয়। আমাদের আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু মানুষের এতো আগ্রহ যে সামাল দিতে পারছি না।
সরেজমিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম দেওয়ানপুর গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রর মাঠে এক একরের বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের হলুদ আভায় ছেয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ মাঠের নজরকাড়া সৌন্দর্যে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন শত শত মানুষ। তারা ছবি তুলছেন, মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’র কথা জানে সবাই, গাছের ছায়ায় বিশ্রাম শেষে ডাল ভেঙে নেওয়া মানুষের গল্পও জানা। তবু কেউ কেউ ছবি তুলতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলছেন ফুল। বেপরোয়া হেঁটে নষ্ট করছেন চারা।
সরেজমিনে জমিতে অনেক চারা বিনষ্ট অবস্থায় দেখা যায়। অনেক ফুলও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে। বেড়াতে আসা সানজিদা সুলতানা নামের এক পর্যটক বলেন, বাগানের সৌন্দর্যের কথা শুনে শহর থেকে দেখতে এসেছি। লোভ সামলাতে না পেরে বাগানে কয়েকটি ছবি তুলেছি। আসলে ফুল ছেড়া মানা। কিন্তু তবুও লোভ সামলাতে পারিনি।
অসচেতন সৌন্দর্যপিপাসুদের আচরণে বিরক্ত অনেক পর্যটকও। ইয়াকুব রাসেল নামের এক পর্যটক বলেন, হাটহাজারীর এই সূর্যমুখী বাগানটি মানুষের নজর কেড়েছে। এতোগুলো সূর্যমুখী ফুল আসলেই দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু ছবি তোলার নামে বাগানের ভেতর প্রবেশ করে গাছ নষ্ট করা হচ্ছে। সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে বাগানের ক্ষতি করছেন কিছু অসচেতন পর্যটক। এটা কাম্য নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানে সূর্যমুখী চাষের উদ্দেশ্য হচ্ছে বীজ উৎপাদন করা। এখান থেকে উৎপাদিত বীজ বিএডিসিকে দেওয়া হবে। পরে তারা কৃষক পর্যায়ে এই বীজ বিতরণ করবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ শুরু করা যাবে।
দেশে বছরে তিন-চার হাজার টন সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপন্ন হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরর দিকে বীজ রোপণ করা হয়। ফুল ফোটার পর পরিপক্ব বীজ সংগ্রহ করা হয়। বপনের পর ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়। প্রতি একর জমিতে সূর্যমুখী আবাদে বীজ প্রয়োজন হয় পাঁচ কেজি বীজ। এক বিঘা জমি চাষে কৃষকের খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। প্রতি শতকে ৪০-৪৫ কেজি বীজ পাওয়া যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখী তেলে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৬ ও ওমেগা ৯, অলিক অ্যাসিড, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি বিদ্যমান। এই তেল কোলেস্টেরলমুক্ত, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও মিনারেল সমৃদ্ধ। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ।
কেএম/এইচকে