ভুক্তভোগী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

দেশে থেকে নানাভাবে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চেষ্টা করেছেন গোপালগঞ্জের মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু নিজ দেশ যেন ফরিদের ভাগ্য ফেরাতে সহায়ক নয়! কীভাবে সংসারের ঘানি টানবেন, সেই চিন্তা তার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে। যতই চিন্তা করেন, কোনো কূলকিনারা খুঁজে পান না। চিন্তায় যখন মাথা ভার, তখনই তাকে কয়েকজন পরামর্শ দিলেন বিদেশে পাড়ি জমানোর। কারণ বিদেশে গেলে ভালো আয় সম্ভব।

৩১ বছর বয়সী এ যুবক ঠিক করলেন প্রবাসে গিয়ে গাড়ি চালাবেন। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সম্মতিও পেলেন। শিখে নিলেন গাড়ি চালানো। নিজ জেলা গোপালগঞ্জের অনেকে বিদেশে গাড়ি চালিয়ে বেশ আয় করছেন। ফরিদও সেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করলেন। ভিসার খোঁজ নিলেন। পেয়ে গেলেন ড্রাইভিং ভিসাও।

দীর্ঘ দুই বছরের চেষ্টায় একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেয়ে রঙিন স্বপ্ন মরে গেল ফরিদের। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করছেন

স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যেন এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। সৌদি আরবে গিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি চালাবেন, সেই স্বপ্ন দিনদিন রঙিন হয়ে উঠছিল। কিন্তু সময়মতো ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়ায় ফরিদের সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল।

গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর যথানিয়মে লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষাও দেন তিনি। তারপর ৮-১০ বার বিআরটিএ কার্যালয়ে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। যখনই বিআরটিএতে গেছেন, তাকে বলা হয় কার্ড নেই। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড মুদ্রণ না হওয়ায় বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়নি। স্লিপ নিতেও বারবার দৌড়াতে হয়েছে। কার্ড কবে পাব জানি না। দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গেল লাইসেন্স পাচ্ছি না। বিদেশে গিয়ে চাকরি করাও হলো না

মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ভুক্তভোগী

গোপালগঞ্জের সুলতানশাহী গ্রামের বাসিন্দা ফরিদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। মঙ্গলবার (২ মার্চ) সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কোথাও যখন কাজ পাচ্ছিলাম না, তখন মনে হলো গাড়ি চালাতে পারি। বন্ধুবান্ধবরা সেই পরামর্শ দিল। ভেবেছিলাম, প্রথমে দেশের রাস্তায় গাড়ি চালাব। তারপর বিদেশে যাব। টুঙ্গিপাড়া বিআরটিএ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চার মাস গাড়ি চালানোর ট্রেনিং নিলাম। তিন মাস পর বিআরটিএ গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের অধীনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণও হলাম।’

ড্রাইভিং লাইসেন্সের আশায় এভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ভুক্তভোগীদের | ছবি- ঢাকা পোস্ট  

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ উত্তীর্ণ হওয়ার কাগজ হাতে পান ফরিদ। তখন তার চোখে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন চকচক করে ওঠে। উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিআরটিএ’র স্থানীয় কার্যালয়ে গিয়ে আঙুলের ছাপও দিয়ে আসেন। কিন্তু তারপর ১০ বার সেই কার্যালয়ে গিয়েও স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আনতে পারেননি। ফরিদ বলেন, যতবার গিয়েছি ততবার ফিরিয়ে দিয়েছে। বলেছে, কার্ড নাই।

২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথম তারিখ দিয়েছিল বিআরটিএ। সর্বশেষ তাকে আগামী ৩০ জুন তারিখ দেওয়া হয়েছে। ফরিদ জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়নি। স্লিপ নিতেও বারবার দৌড়াতে হয়েছে। কার্ড কবে পাব জানি না। দুই বছরের বেশি সময় হয়ে গেল লাইসেন্স পাচ্ছি না। বিদেশে গিয়ে চাকরি করাও হলো না। 

দীর্ঘ দুই বছরের চেষ্টায় একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেয়ে রঙিন স্বপ্ন মরে গেল ফরিদের। বর্তমানে তিনি রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করছেন।

পিএসডি/এসএসএইচ/এইচকে/এমএআর