দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। ডেঙ্গুর চলমান প্রকোপ ২০ অক্টোবরের আগে কমছে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেপ্টেম্বরে আগের মাসের (আগস্ট) চেয়ে তিনগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসের এক সপ্তাহেই সাড়ে তিন হাজার রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুর বাড়তি প্রকোপে রাজধানীর ব্লাড ব্যাংক ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীর জন্য রক্ত ও প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রক্ত ও প্লাটিলেট সরবরাহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ এসআই কুদ্দুস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক মাস আগে যদি ৭০ শতাংশ প্লাটিলেট যেত, এখন শত ভাগ যাচ্ছে। দুই মাসের আগে কথা যদি চিন্তা করি, এমন চাপ ছিল না।

কথা বলছেন রিদম ব্লাড ব্যাংকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফ মাহমুদ

তিনি বলেন, এখন গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ব্যাগ প্লাটিলেট দিতে হচ্ছে। এক মাস আগেও যা ছিল চার-পাঁচ ব্যাগ। আমাদের পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের মতো অনেক ব্লাড ব্যাংক ঢাকায় আছে। প্রাইভেট হাসপাতালেও আছে।  হাসপাতালগুলো যখন প্লাটিলেটের চাপ সামাল দিতে পারছে না, তখন বাইরের ব্লাড ব্যাংকের দিকে যাচ্ছে মানুষ। প্লাটিলেটের জন্য বাছাই করা বিশেষ ডোনার লাগে। সবকিছু মিলিয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়েছে। আমি মনে করি, অবস্থা ভয়াবহ।

আরও পড়ুন : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ কেন? 

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় এমন রোগী আসে যাদের প্লাটিলেট ২০ হাজারের কম থাকে। যতক্ষণ না রোগীর ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ডাক্তাররা তাকে প্লাটিলেট দিচ্ছেন না। কারণ, প্লাটিলেট দেওয়ার মতো শত শত রোগী এখন আছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্লাটিলেট সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

রিদম ব্লাড ব্যাংকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফ মাহমুদ বলেন, এখন প্রতিদিন আমাদের প্লাটিলেট যাচ্ছে ২৫-৩০ ব্যাগ। এক মাস আগেও যা ছিল ১০-১৫ ব্যাগ। ডেঙ্গু তো আছেই। আসছে শীত। এ সময়ে মানুষের অপারেশন একটু বেশি হবে। সে কারণে রক্তের চাহিদা বেড়েছে।

শুধু ব্লাড ব্যাংক নয়, স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানের দিকেও ছুটছেন মানুষ। মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘সন্ধানী’র ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি আমির হোসাইন সিয়াম বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্লাটিলেট সংগ্রহ দুভাবে হয়। প্রথমত, আটজন ব্যক্তি থেকে এক ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয়ত, শক্ত-সামর্থ্য মানুষ হলে এবং প্লাটিলেট বেশি থাকলে এক ব্যক্তির কাছ থেকেও এক ব্যাগ প্লাটিলেট নেওয়া যায়।

আরও পড়ুন : শিশুরা কেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়? 

‘একটি বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। এ মেশিন সব হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংকে থাকে না। আমাদের কাছে মেশিনটি নেই। ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেটের জন্য অনেকে আমাদের কল দেন। আমরা তখন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ডোনার সংগ্রহ করে জানাই। পরে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে প্লাটিলেট দিয়ে আসেন।’

রিদম ব্লাড ব্যাংক

গত দুই-তিন মাস ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। অল্প অল্প করে তা বাড়ছে। আগে দিনে ১০-১২টি কল ধরতে হতো, এখন ১৮-২০টা কল ধরতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশই ডেঙ্গু রোগীর জন্য ডোনার আর প্লাটিলেট চেয়ে-- বলেন আমির হোসাইন সিয়াম।

ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি

গতকাল ৭ অক্টোবর সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে।

আরও পড়ুন : ডেঙ্গু : নাগরিক ও দায়িত্বশীলদের দায় 

গত এক দিনে দেশে ২৪০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৮২ জনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ১৯২ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৭২৫ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ৫৫৭ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৭ হাজার ১৭৭ জন।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এটি চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এএজে/আরএইচ/এমএআর/