ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও পরিচালকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত ৬ অক্টোবর কমিশনে এ সংক্রান্ত মামলা অনুমোদন দিয়েছিল।

মামলার আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, পরিচালক রুবাইয়াৎ খালেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, এসএভিপি ও হেড অব ফিন্যান্স এইচআর মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র ম্যানেজার মনোরঞ্জন চক্রবর্তী, ক্রেডিট-ইন-চার্জ মোহাম্মদ রফিকুল আলম, সিনিয়র ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম এবং সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি শেখ খালেদ জহির।

অন্যদিকে পিএফআই সিকিউরিটিজের আসামিরা হলেন, পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিকল্প পরিচালক এম. এ খালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মুসফিকুর রহমান।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চারুশীলের সত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ নামে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি ও বিতরণ করিয়ে নেন। পরে পিএফআই সিকিউরিটিজের হিসাবে জমা দিয়ে ১০ কোটি টাকা থেকে ৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৬ টাকা স্থানান্তর, পাচার, প্লেসমেন্ট ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

সূত্র জানায়, গত ২০১৪ সালে পিএফআই সিকিউরিটিজ চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল তখন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পিএফআই সিকিউরিটিজের মালিক এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবাইয়াত খালেদ গোপনে পরিকল্পনা তৈরি করে তাদেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চারুশীলের ব্যবসা সম্প্রসারণের নামে ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ঋণের আবেদন করান। ওই আবেদন পাস হওয়া ও ঋণের অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এম এ ওয়াহাবকে তাদের অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল।

তখন এম এ ওয়াহাব পিএফআই সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্বে ছিলেন। পিএফআই সিকিউরিটিজের মালিক ও তার ছেলে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের ফারইস্ট ফাইন্যান্সের সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কৌশলে ম্যানেজ করেছিলেন। মেসার্স চারুশীলের নামে ঋণ নিয়ে পিএফআই সিকিউরিটিজ এই ঠিকাদারি কোম্পানির মাধ্যমেই দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এম এ ওয়াহাব ও সেলিম আহমেদ মৃত্যুবরণ করায় তাদের বাদ দিয়ে ওই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

আসামিদের মধ্যে পিএফআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিকল্প পরিচালক এম এ খালেক ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক রুবাইয়াৎ খালেদ গোয়েন্দা পুলিশের পৃথক মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আরএম/এসকেডি