হুইল চেয়ারে বসেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

বুধবার (৩ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা চলাকালে শেরাটন ক্রসিংয়ে পুলিশ আটকে দেয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

এর আগে, প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রাটি কদম ফোয়ারা, মৎস্যভবন এবং শাহবাগ মোড়ে তিনটি পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শেরাটন ক্রসিংয়ে আটকা পড়ে। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে আজকের পদযাত্রার ইতি টানা হয়। পুলিশি এ বাধায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা করিনি। আমরা বলছি বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন, দাবায় রাখতে পারবা না। আমাদেরকেও দাবায় রাখতে পারবেন না। আমরা দেশে শৃঙ্খলা চাই, ন্যায়নীতি চাই।’

এ সময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তানও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে পড়তে পারে। আপনারা আপনাদের যথাযথ শ্রমের মর্যাদা পান না। আজকে জনগণের পক্ষে আপনাদেরকেও থাকতে হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, জনগণের পক্ষে কথা বলতে চাই, আপনাদের কথা বলতে চাই, আমাদের কথা বলতে চাই। আপনাদের কাছে হয় তো নির্দেশ আছে তাই এখানে আটকে দিয়েছেন। আমাদের সবাইকে যেতে না দেন, অন্তত ২০ জনের একটি দলকে যেতে দেন।’

একই সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি একবার চিন্তা করেছেন, কেন আজকে মানুষ আপনাদের ঘৃণা করছে? পুলিশকে সরকার তাদের গোলাম বাহিনী বানিয়েছে। আপনারা জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ান, জনগণের জন্য কাজ করুন। আমরা আপনাদের জন্য জীবন দেব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আজকে আমাদের এই কর্মসূচি পদযাত্রার। আজকে আমরা আপনাদের সঙ্গে মারামারি করব না। আমরা সেদিনই লড়াই করব, যেদিন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই পদযাত্রা আজকে এখানে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা দিতে চাই, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে নাগরিকদের মৌলিক বাকস্বাধীনতা যেভাবে হরণ করা হচ্ছে সেভাবে এটি গদি রক্ষার নামে কাজে লাগানো হচ্ছে। জামিন একটি আইনি অধিকার, আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি কার্টুন আকার দায়ে তারা জামিন পাচ্ছেন না। আমরা পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই, আজকে পদযাত্রা করতে এসেছি, আজকে আমাদের আটকিয়েছেন। আমরা আজকে বাধা ভাঙছি না। ২৬ মার্চের মধ্যে যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল না হয় আমরা এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করব। সেদিন আমরা ব্যারিকেড ভাঙব, অতিক্রম করব। ২৬ তারিখের মধ্যে এই আইন বাতিল করেন, না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

এর আগে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক সমাবেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান বিশিষ্টজনরা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন লিখিত বার্তায় এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, লেখক ও প্রাবন্ধিক অরূপ রাহা, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল আলম ভুঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

এমএইচএন/এফআর