পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি আর দেশি-বিদেশি অপশক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে বিশ্বের ইতিহাসের বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। শিশু শেখ রাসেলও রক্ষা পায়নি এ হত্যাকাণ্ড থেকে। 

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রও সেদিন হত্যাকারীদের পাশে দাঁড়ায়। জাতি হিসেবে আমরা ডুবলাম আকণ্ঠ লজ্জায়। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় মাত্র ১১ বছর বয়সে শহিদ হয় রাসেল। স্বল্পস্থায়ী জীবনের অধিকারী হলেও তার আতিথেয়তা, পরোপকার এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলীর জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ রাসেল আমাদের হৃদয়ের গভীরে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন। 

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বন অধিদপ্তরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। 

শাহাব উদ্দিন বলেন, হত্যাকারীরা জানতো জাতির পিতার রক্তের ধারা যতদিন এ দেশের মাটিতে থাকবে ততদিন বাংলাদেশকে ঘিরে কোনো কুপরিকল্পনাই তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তাই তারা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারাকেও চিরতরে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। আর এ কারণেই শিশু রাসেলকে হত্যা করতেও বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি তারা। ষড়যন্ত্রকারীদের সকল আশঙ্কাকে সত্য করে জাতির পিতার রক্তের ধারার হাত ধরেই আজ বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। পিতা-মাতা-ভাই-ভাবীকে হারানোর শোককে আত্মস্থ করে সারা দেশের মানুষকেই পরিবার করে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে হত্যার রাজনীতি বন্ধে আপসহীনভাবে কাজ করছে। ইতিহাসের কী নির্মম প্রতিশোধ, দেশি-বিদেশি দীর্ঘ চক্রান্ত ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর কন্যার সময়েই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কাজ শেষ হয়, হত্যাকারীদের সাজা কার্যকর করার কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে, সকল সাজা কার্যকর করার মধ্য দিয়েই এর সমাপ্তি হবে। আমাদের সরকার এমন একটা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকবে না, এরূপ নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। কায়মনে কামনা করি আর কোনো শিশু রাসেল যেন নিষ্ঠুরতার শিকার না হয়। জন্মদিনে শেখ রাসেলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

আলোচনা সভা শুরুর আগে মন্ত্রী বন অধিদপ্তরে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে বন অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। দোয়া মাহফিলে শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। দোয়া মাহফিলের পর বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট কর্তৃক উদ্ধার করা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অবমুক্ত করেন মন্ত্রী। 

এমএইচএন/এনএফ