চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাবিপ্রবি) স্থাপনের জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্শ্বিবিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে সুকৌশলে সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযোগের তীর আলোচিত চাঁদপুরের চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার স্বজন, শিক্ষামন্ত্রীর ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ এবং মামাতো ভাই ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, চাঁদপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর দিকে। এছাড়া রয়েছে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক) টুটুল মজুমদারের নামও।

এদিকে জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের সঙ্গে বড় ভাইয়ের নাম জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘চাঁদপুরে আমার ক্রয় সূত্রে কোনো জমি নেই। পৈত্রিক সূত্রে থাকতে পারে। আমার কাছে যা তথ্য প্রমাণ আছে, তা থেকে বলতে পারি, আমার বড় ভাই অধিগ্রহণের আগেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আমার বা আমার পরিবারের এই জায়গা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যারা এমন তথ্য ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার পরিবারের কেউ কোনো ধরনের দুনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তবে অন্য কেউ দুর্নীতি করেছে কি না তা তদন্ত করে দেখা উচিত এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ 

অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক অনুসন্ধানের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে দুদকের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ এর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্টের একটি টিম। দুদক টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।

অভিযানের পর বিষয়টি নিয়ে গত ২১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সেটা আর হয়নি। যদি অভিযুক্তরা এ কারসাজিতে সফল হতেন তাহলে সরকারের অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হতো।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর সাব রেজিস্টার অফিসের নির্ধারিত বাজারমূল্য অনুযায়ী নাল, বাড়ি-বাগান, পুকুর-ডোবা ও ভিটি শ্রেণির মূল্য পর্যায়ক্রমে ১৩ হাজার ৮০২ টাকা, ২৩ হাজার ৯৬৬ টাকা, ৩৮ হাজার ৯৫৬ টাকা এবং ৩৩ হাজার ২৯৪ টাকা ধরে প্রকল্প প্রাক্কলন দাঁড়ায় ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা। কিন্তু চাঁদপুর জেলার ১০ নং লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ অন্যরা ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন। এতে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক।

এদিকে সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। চলতি বছরের ১ আগস্ট মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সেলিম খান বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আরএম/এসকেডি